Class X MIL

 

বিজয়া দশমী 

প্রশ্নঃ ‘বিজয়া দশমী’ কবিতার সারাংশ লিখ।

উত্তরঃ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘বিজয়া দশমী’ সনেটে কবির জন্মভূমির প্রতি আকর্ষণ ব্যক্ত হয়েছে। শুধু জন্মভূমির মাটি নয়, তার উৎসব ও সংস্কৃতির সঙ্গে অন্তরের গভীর টান সফল ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

          বাঙালির প্রধান উৎসব দূর্গাপূজা। দেবী দূর্গা বা উমাকে বাঙালি নিজের কন্যার মতই বরণ করে। সারাটি বছর এই চার দিনের জন্য অপেক্ষা করা হয়। শেষ দিন অর্থাৎ দশমী বিসর্জন শোকে আচ্ছন্ন থাকে। কবি নবমীর রাত্রিকে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

          মানুষ রাত্রিবেলা দিনের আশায় চেয়ে থাকে। মাইকেল কিন্তু সেই রাত্রিকে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কারণ নবমীর এই রাত্রি শেষেই দশমী। দেবী দূর্গার সঙ্গে বিসর্জন হয় তিন দিনের আনন্দও। বাঙালি আরও একটি বছর অপেক্ষা করবে বিরহের যন্ত্রণা নিয়ে। তিন দিন ঘরে ঘরে দীপ জ্বলে অন্ধকার দূর করে, মন্ত্র ও সঙ্গীতের মধুর সুর বেদনা ভুলিয়ে দেয়। এই আলো ও আনন্দ চলে যাওয়ার পর অন্ধকার ও বেদনা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই কবি নবমীর রাত্রি ও দেবী দূর্গাকে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।


প্রশ্ন: বিজয়া দশমী সম্পর্কে কী জানো লেখো।

উত্তর: বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। সারা বছর এই উৎসবের জন্য বাঙালিরা অপেক্ষা করে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী — এই তিন দিন প্রচুর আনন্দে ভরে ওঠে। তারপর দশমীর দিন বিসর্জনের মাধ্যমে সেই আনন্দ শেষ হয়ে যায়। তাই নবমীর রাত যেন শেষ না হয় এই কামনা করে বাঙালি। দুর্গা বা উমা বাঙালির কাছে কন্যার মতো। ঠিক যেমন গিরিরাজ হিমালয়ের স্ত্রী মেনকার কাছে আপন কন্যাকে বিদায় দেওয়া। তাই বিজয়া দশমীতে বাঙালির বেদনা মেনকার বেদনার সমান। 

 

 কপালকুণ্ডলা

প্রশ্ন ঃ কপালকুণ্ডলা চরিত্রটি আলোচনা কর।

উত্তর : কপালকুণ্ডলা নামটি আমাদের পাঠে নেই। আমরা তার সঙ্গে পরিচিত হই নবকুমারের মাধ্যমে। সে এক অপুর্ব সুন্দরী রমণী। তার সর্পিল চুল একেবারে গুলফ পর্যন্ত দীর্ঘ। চুল এতো ঘন যে তা মুখ অনেকটা ঢেকে রেখেছে, যেন কালো মেঘের ফাঁকে পূর্ণিমা চাঁদের উজ্জ্বলতা। ডাগর চোখের দৃষ্টি স্থির, স্নিগ্ধ, গম্ভীর অথচ জ্যোতির্ময়। তার কাঁধ ও বাহু চুলে ঢাকা। তার শরীরে কোনও অলঙ্কার নেই।

          সে লজ্জায় আনতও নয়, আবার লজ্জাহীনাও নয়। তার কণ্ঠস্বর ছিল মধুর, চলাচল ছিল রহস্যময়। অজানা, অচেনা যুবক নবকুমারের প্রতি তার মনোভাব স্পষ্ট না হলেও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে জীবনের ঝুকিও নিয়েছিল সে।

 

প্রশ্ন : কাপালিক চরিত্রটি চিত্রিত করো।

উত্তর : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস থেকে গৃহীত ‘সাগরসঙ্গমে নবকুমার’ পাঠে আমরা কাপালিকের ভীষণ অদ্ভুত পরিচয় পাই। উঁচু বালিয়াড়ির উপরে ধ্যানমগ্ন ছিল কাপালিক। তার বয়স প্রায় পঞ্চাশ, কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাঘছাল জড়ানো, গলায় রুদ্রাক্ষমালা, আয়ত মুখমণ্ডল দাড়ি গোঁফে ভরা। সে এক পঁচা গলা মুণ্ডহীন মরদেহের উপর বসে ছিল। তার সামনে মাথার খুলির মধ্যে লাল মাদক, চারদিকে মানুষের হাড় পড়ে রয়েছে, গলার রুদ্রাক্ষমালাতেও হাড়ের টুকরো রয়েছে।

            কাপালিক কম কথা বলে। তার স্বভাব ও চেহারার মধ্যে মিল রয়েছে। সে একজন তান্ত্রিক। গভীর জঙ্গলে সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধি লাভ করা তার উদ্দেশ্য। নরবলি এই সাধনার অঙ্গ। নবকুমারকেও বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে সে আশ্রয় দিয়েছিল।

 

বাংলার নবযুগ

 

প্রশ্ন — বাংলার নবযুগ প্রবর্তনে সুরেন্দ্রনাথের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর —  ব্রিটিশ আমলে বাংলায় নবযুগ শুরু হয়েছিল, যা অবিভক্ত ভারতবর্ষকে পথ দেখাতে সক্ষম ছিল। এই নবজাগরণে যে সব মহান ব্যক্তিত্বের অবদান ছিল তাঁদের মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম অগ্রগণ্য। জ্ঞান, অসাধারণ বাগ্মিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ইত্যাদি ছিল তাঁর বিশেষ গুণ। কলিকাতা ছাত্রমণ্ডলীর মাধ্যমে তিনি বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন এর সহ-সভাপতি। শিখদের বিদ্রোহের কাহিনি ‘The Rise of Sikh Power in India’ শীর্ষক বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন ভারতের শৌর্যবীর্যের কাহিনি তখনকার নতুন প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে পারত না। ছোট জনগোষ্ঠী শিখদের কাছে বিশ্ববিজয়ী ইংরাজরা যে বার বার হেরেছিল, সেই সত্য এক নতুন শক্তি দিয়েছিল বাংলার জনমনে। আর তা সম্ভব হয়েছিল সুরেন্দ্রনাথের অসাধারণ প্রতিভার পক্ষে।

 

প্রশ্ন — বাংলার নবযুগ প্রবর্তনে আনন্দমোহনের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর —  ব্রিটিশ আমলে বাংলায় নবযুগ শুরু হয়েছিল, যা অবিভক্ত ভারতবর্ষকে পথ দেখাতে সক্ষম ছিল। এই নবজাগরণে যে সব মহান ব্যক্তিত্বের অবদান ছিল তাঁদের মধ্যে আনন্দমোহনও একজন। জ্ঞান, দেশপ্রেম, সাংগঠনিক দক্ষতা ইত্যাদি ছিল তাঁর বিশেষ গুণ। কলিকাতা ছাত্রমণ্ডলীর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিলাত থেকে আসার সময় বোম্বাই (মুম্বাই) শহরে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠা দেখে আসেন তিনি। কলকাতায় ফিরেই তাঁর উদ্যোগে গড়ে তোলেন কলিকাতা ছাত্রমণ্ডলী। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নন্দকৃষ্ণ বসু প্রমুখ প্রতিভাবান ব্যক্তিদের সংগঠিত করে বাংলার শিক্ষিত সমাজের মধ্যে যে জাগরণের ঢেউ তিনি তুলেছিলেন তা বাংলায় নবযুগের রূপ নেয়।


 প্রতিনিধি

প্রশ্ন:— ‘প্রতিনিধি’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।

ঊত্তর :—  ‘প্রতিনিধি’ কবিতাটিতে কবি প্রকৃত গণতন্ত্রের এক নমুনা প্রদর্শন করেছেন। শাসনভার গ্রহণ করার পর শাসকের মনে অহঙ্কার বাসা বাঁধে। তাঁরা নরপতি অর্থাৎ মানুষের প্রভু হয়ে যায়। কিন্তু শাসকের কাজ হল প্রজার জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, সম্পদের সুষম বন্টন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। এইভাবে সুশাসন আনতে গেলে রাজাকে হতে হবে প্রতিনিধি, প্রভু নয়। এ ধরণের সুশাসককে অবশ্যই বৈরাগ্য অবলম্বন করতে হয়। তিনি নিজের ক্ষমতা বা সম্পত্তি বৃদ্ধির জন্যে চেষ্টা করতে পারবেন না। বরং ভোগ-বিলাস ও সুখের আশা ত্যাগ করতে হবে।

‘প্রতিনিধি’ কবিতায় শিবাজির গুরুদেব শিবাজির হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিয়েছেন এবং বৈরাগ্যের প্রতীকরূপে নিজের গেরুয়া উত্তরীয়কে নিশান বানানোর নির্দেশ দিয়ছেন। এভাবে এক ভিক্ষুকের প্রতিনিধি করে দিয়েছেন স্বয়ং রাজাকে। শাসনকর্তা ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন নিজের প্রভুত্ব দেখানোর জন্যে নয়, দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হওয়ার জন্যে। আলোচ্য কবিতায় এই প্রতিনিধিত্বের ব্যাপার অত্যন্ত সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে। তাই ‘প্রতিনিধি’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।

প্রশ্ন :—  ব্যাখ্যা করো

          হে ভবেশ, হে শঙ্কর, সবারে দিয়েছ ঘর,

                   আমারে দিয়েছ শুধু পথ।

উত্তর :—  আলোচ্য অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘প্রতিনিধি’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

সেতারার দূর্গের চূড়া থেকে শিবাজি মহারাজ দেখলেন তাঁর গুরু রামদাস দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষে করছেন। শিবাজির মনে হল গুরুর কোনও অভাব না থাকা সত্ত্বেও লোভের বশে ভিক্ষা করছেন। ওই সময় শোনা গেল গুরু রামদাসের এই গান।

গুরু রামদাসের এই গানে রবীন্দ্রনাথের উপর বাউল সঙ্গীতের মরমী ধারার প্রভাব লক্ষ করা যায়। সম্পদের অভাব নেই, তবুও রামদাস পথে পথে ভিক্ষা করছেন। বলছেন, তাঁর ঘর নেই, অর্থাৎ তাঁর নিজস্ব বলে কিছু নেই। জ্ঞানের সাধনায়, পরমাত্মাকে পাওয়ার নেশায় তিনি ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন। সেজন্যে তাঁর ঘর নেই, তাঁর জন্যে রয়েছে পথ। ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্যে তাঁর এই বৈরাগ্যের সাধনা।

 

প্রতিনিধি

প্রশ্ন:— ‘প্রতিনিধি’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।

ঊত্তর :—  ‘প্রতিনিধি’ কবিতাটিতে কবি প্রকৃত গণতন্ত্রের এক নমুনা প্রদর্শন করেছেন। শাসনভার গ্রহণ করার পর শাসকের মনে অহঙ্কার বাসা বাঁধে। তাঁরা নরপতি অর্থাৎ মানুষের প্রভু হয়ে যায়। কিন্তু শাসকের কাজ হল প্রজার জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, সম্পদের সুষম বন্টন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। এইভাবে সুশাসন আনতে গেলে রাজাকে হতে হবে প্রতিনিধি, প্রভু নয়। এ ধরণের সুশাসককে অবশ্যই বৈরাগ্য অবলম্বন করতে হয়। তিনি নিজের ক্ষমতা বা সম্পত্তি বৃদ্ধির জন্যে চেষ্টা করতে পারবেন না। বরং ভোগ-বিলাস ও সুখের আশা ত্যাগ করতে হবে।

‘প্রতিনিধি’ কবিতায় শিবাজির গুরুদেব শিবাজির হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিয়েছেন এবং বৈরাগ্যের প্রতীকরূপে নিজের গেরুয়া উত্তরীয়কে নিশান বানানোর নির্দেশ দিয়ছেন। এভাবে এক ভিক্ষুকের প্রতিনিধি করে দিয়েছেন স্বয়ং রাজাকে। শাসনকর্তা ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন নিজের প্রভুত্ব দেখানোর জন্যে নয়, দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হওয়ার জন্যে। আলোচ্য কবিতায় এই প্রতিনিধিত্বের ব্যাপার অত্যন্ত সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে। তাই ‘প্রতিনিধি’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।

প্রশ্ন :—  ব্যাখ্যা করো

          হে ভবেশ, হে শঙ্কর, সবারে দিয়েছ ঘর,

                   আমারে দিয়েছ শুধু পথ।

উত্তর :—  আলোচ্য অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘প্রতিনিধি’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

সেতারার দূর্গের চূড়া থেকে শিবাজি মহারাজ দেখলেন তাঁর গুরু রামদাস দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষে করছেন। শিবাজির মনে হল গুরুর কোনও অভাব না থাকা সত্ত্বেও লোভের বশে ভিক্ষা করছেন। ওই সময় শোনা গেল গুরু রামদাসের এই গান।

গুরু রামদাসের এই গানে রবীন্দ্রনাথের উপর বাউল সঙ্গীতের মরমী ধারার প্রভাব লক্ষ করা যায়। সম্পদের অভাব নেই, তবুও রামদাস পথে পথে ভিক্ষা করছেন। বলছেন, তাঁর ঘর নেই, অর্থাৎ তাঁর নিজস্ব বলে কিছু নেই। জ্ঞানের সাধনায়, পরমাত্মাকে পাওয়ার নেশায় তিনি ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন। সেজন্যে তাঁর ঘর নেই, তাঁর জন্যে রয়েছে পথ। ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্যে তাঁর এই বৈরাগ্যের সাধনা।


বলাই

 

প্রশ্ন:— বলাইয়ের চরিত্র আলোচনা করো।

ঊত্তর :—  ‘বলাই’ গল্পে বলাই মুখ্য চরিত্র। সে আর দশটি শিশুর মতো নয়। তার মনের মিল উদ্ভিদের সঙ্গে। গাছের মতই সে কথা না বলে শুধু দেখে, ভাবে। বৃষ্টি ও রোদ থেকে সে যেন উদ্ভিদের মতই জীবনরস সংগ্রহ করে। বৃক্ষ-লতা-গুল্ম-তৃণ যেন তার অন্তরের আত্মীয়। সে এক মাতৃহীন শিশু। তার বাবাও প্রবাসী। নিঃসন্তান কাকা-কাকিমার স্নেহে সে লালিত। কাকা একজন বৈষয়িক মানুষ, তার আবদার শোনেন তার কাকিমাই। তার সমবয়সীরা তার মতো নয়। বলাই নানা উদ্ভিদের অঙ্কুরণ থেকে বেড়ে ওঠা খুব গভীরভাবে লক্ষ করত। তাদের কেউ কোনও কারণে নষ্ট করতে চাইলে তার কান্না পেত। কিন্তু সবাই তাকে পাগল ভাববে, এই ভয়ে সে কাঁদতে বা প্রতিবাদ করতেও পারত না। সে বুঝে নিয়েছিল, তার এই ব্যথা ও অনুভুতি একান্তই তার নিজস্ব।

 

প্রশ্ন:— ‘এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার’— তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

ঊত্তর :—  বলাইয়ের কাকা অর্থাৎ এই গল্পের কথকের মাধ্যমে গল্পকার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটনের আভাস দিয়েছেন। কোটি বছর আগেকার পৃথিবীতে ধীরে ধীরে জীবনের শুরু হয়। তখন এই পৃথিবীতে কেউ ছিল না, কিছু ছিল না। শুধু পাথর আর মাটি ছিল। জল এল, পাঁক হল, তার থেকে প্রথমে এল এক ধরণের উদ্ভিদ। ধীরে ধীরে নানা প্রকার উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবজন্তু বিবর্তিত হয়ে এই পৃথিবীতে এলেও উদ্ভিদ সবার আগে এসেছে। বলাই উদ্ভিদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে বা তাদের আনন্দ-ব্যথা অনুভব করতে পারে। তাই তার কাকার মতে তার আসল জন্ম সেই কোটি বছর আগেকার সৃষ্টিলগ্নে।

 

প্রশ্ন:— বলাইয়ের কাকিমা দু’দিন অন্নগ্রহণ করেননি কেন?

ঊত্তর :—  ‘বলাই’ গল্পে কাকিমার চরিত্রটির এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিঃসন্তান কাকিমার মাতৃত্ব এক গভীর শূন্যতায় ভুগছিল। বলাই এই শূন্যতা পুরণ করত তার ‘অস্বাভাবিক’ আবদার দিয়ে। স্বামীকে বলে প্রায়ই তিনি বলাইয়ের অনুরোধ রক্ষা করতেন। শিমূল গাছের চারাটি এক বেমানান জায়গায় গজিয়ে উঠেছিল। বলাইয়ের অনুরোধে কাকিমা এই গাছ না কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

 এদিকে বলাইয়ের বাবা তাকে পড়াশোনার জন্য প্রথমে সিমলা ও পরে বিলাতে পাঠিয়ে দেওয়ার কাকিমার অন্তর আবার শূন্য হয়ে গেল। এই শূন্যতার মধ্যে শিমূল গাছটি ছিল কাকিমার অন্তরের একমাত্র আশ্রয়। তাঁর স্বামী তাঁর অজান্তেই গাছটি কেটে ফেলায় তাঁর অন্তর আবার শূন্য হয়ে গেল। এই দুঃখে অভিমানে কাকিমা দু’দিন অন্ন গ্রহণ করেননি।


জীবন সঙ্গীত

 

প্রশ্ন:— ‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে মানব জীবনের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করেছেন আলোচনা করো।

ঊত্তর :— স্বনামধন্য কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতাটি লংফেলোর ইংরাজি কবিতা ‘The Psalm of Life’ এর ভাবানুবাদ। কবি উদাসীন ও কর্মবিমুখ জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।

দুর্লভ মানবজন্মকে সার্থক করার জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা জরুরি। কারণ জীবাত্মা অবিনশ্বর। শুধু বৈষয়িক সুখের আশা এক ফাঁদের মতো। তবে সমাজের উন্নতির জন্য সংসারী মানুষের মতোই কাজ করে যেতে হবে। আয়ু সীমিত, সময় চলমান, অর্থ ও শারীরিক শক্তির স্থায়িত্ব নেই।

এই পৃথিবী এক যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে দুর্লভ মহিমা অর্জনের লক্ষে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তায় সময় নষ্ট না করে বর্তমানে কাজ করে যেতে হবে। কারণ সময়ের সার বর্তমান। প্রসিদ্ধ মানুষকে অনুসরণ করে নিজের সাফল্য নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এই সাফল্যকে পরবর্তী প্রজন্ম অনুসরণ করবে। তাই নিজ নিজ সংকল্প মতো সাধনায় রত থাকতে হবে।

অথবা

মহাকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জীবন সংগীত’ কবিতায় মানব জীবনের অনিত্যতা সত্ত্বেও তাকে সার্থক করে তোলার মূল মন্ত্র সম্বন্ধে পাঠককে জানিয়েছেন। লংফেলোর লেখা ‘The Psalm of Life’ এর অনুকরণে লেখা এই কবিতাটি জীবন সম্বন্ধে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী রাখার আহ্বান জানায়।

আয়ু শেওলায় জমে থাকা জলবিন্দুর মতই ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু মানব জনম সার। জীবাত্মা অবিনশ্বর, তাই জীবনের মানে আছে। তাকে অসার বলে হাপিত্যেশ করার মানে নেই। সংসারী মানুষের উচিত সুখের আশা না করেই জগতের ভালো হয় এমন কাজ করে যাওয়া। জীবন মানেই অখণ্ড সুখ নয়, সুখ-দুখের মোকাবিলা করার মধ্যেই জীবনের আনন্দ।

সংসার এক যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। অতীতের জন্য পরিতাপ বা ভবিষ্যতের জন্য হা-হুতাশ করে বর্তমান সময়কে নষ্ট করার কোনও মানে নেই। মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করলে চিরস্থায়ী কীর্তি থাকবে। যে পথে মহান লোক অমর হয়েছেন, সেই পথ ধরেই চলতে হবে। 

 

প্রশ্ন:-- নিহিতার্থ লেখো।

ক)মহিমাই জগতে দুর্লভ

উত্তর: মানুষ অনেক সময় তার ছোট ছোট অপ্রাপ্তি নিয়ে আফসোস করে। কিন্তু মানুষের ইতিহাস ও মহান মানুষের জীবনী পড়লে বোঝা যায় যে তারা বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে অনেক ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন দিয়েছেন। সেই কারণেই তাঁদের মহিমা অমর হয়ে আছে। এই মহিমার জন্যই মানুষ প্রাণপণ চেষ্টা করে। কিন্তু সবার ভাগ্যে তা জোটে না।


খ) আয়ু যেন শৈবালের নীর

উত্তর: আমাদের আয়ু অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়টি অত্যন্ত স্বল্পকালীন। এমনিতেই মৃত্যু যে কোন সময়ে আমাদের প্রাণ বায়ু কেড়ে নিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘায়ু হলেও অনন্ত সময় ও মানুষের আশা প্রত্যাশার তুলনায় তা খুবই সীমিত। আমাদের আয়ু এতটাই ক্ষণস্থায়ী যে কবি তাকে শ্যাওলায় লেগে থাকা জলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।


প্রার্থনা 

প্রশ্ন: 'প্রার্থনা' কবিতাটি অবলম্বনে কবির বক্তব্য বিষয় পরিস্ফুট কর।

উত্তর: বৈষ্ণব পদাবলী ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বিদ্যাপতি রচিত 'প্রার্থনা' কবিতা কবির আধ্যাত্মিক উপলব্ধির এক অনন্য নিদর্শন। কবি ইহ জীবনকে ক্ষণস্থায়ী হিসেবে জেনেছেন। পরকালের তুলনায় তা এতই ক্ষণস্থায়ী যে তাকে উত্তপ্ত বালুকারাশির উপর এক বিন্দু জলের স্থায়িত্বের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। শেষ জীবনে পরকালের চিন্তায় তাঁকে ধরে বসেছে। সন্তান, বন্ধু, নারী ও সমাজের দ্বারা বেষ্টিত মানুষ এতটাই মগ্ন যে ঈশ্বরকে ভুলে যায়। জীবনের অর্ধেক চলে যায় ঘুমে, শৈশব ও অসুস্থ অবস্থায় আর এক ভাগ চলে যায়, যৌবনে রঙ্গ রসে মত্ত থাকে মানুষ। তাই ঈশ্বরের আরাধনা করার সময় বাঁচে না।

এই অবস্থায় পরকালে নিস্তার পাওয়ার জন্য দয়াময় ঈশ্বরের দয়াই একমাত্র ভরসা। কবি বৈষ্ণব, তাই মাধব অর্থাৎ বিষ্ণু তাঁর উপাস্য। তিনি অনাদি অনন্ত। ব্রহ্মা বিষ্ণু হইতে উৎপন্ন ও বিষ্ণুতেই বিলীন, যেমন সাগরের ঢেউ সাগর থেকে উৎপন্ন হয়ে সাগরের বুকে বিলীন হয়ে যায়। তাই কবি আদি অথচ অনাদি ঈশ্বরের কাছে নিজের ত্রাণভার অর্পণ করেছেন।


পিতা ও পুত্র 


প্রশ্ন: সাজাহানের পিতৃ স্নেহের যথাযথ বর্ণনা দাও।

উত্তর: সুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'সাজাহান' নাটকের 'পিতা ও পুত্র' পাঠের শাহজাহান জীবনের শেষ দিকে শারীরিকভাবে অক্ষম এক মুঘল সম্রাট। এই শাহজাহান আবেগপ্রবণ পিতা, কোন‌ও রাজদণ্ডধারী নন। শাহজাহানের বার্ধক্য ও ক্ষমতার অভাবের সুযোগে দারাকে সন্দেহ করে বাকি তিন পুত্র নিজ নিজ স্থান থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। দারা এই বিদ্রোহ দমন করতে প্রস্তুত। কিন্তু শাহজাহান স্নেহের বশবর্তী হয়ে এই দমন নীতিতে আগ্রহী নন। তিনি চান, তাঁর ছেলেরা দিল্লি পৌঁছে গেলে স্নেহের মাধ্যমে বুঝিয়ে সমাধান করবেন। কিন্তু তাঁর মেয়ে জাহানারার প্রবল ব্যক্তিত্ব শাহজাহান ও দারাকে বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। এখানে শাহজাহানের উক্তি, 'এ যুদ্ধে যে পক্ষেরই পরাজয় হয়, আমার সমান ক্ষতি।' আবার বলেন, 'পিতা যখন পুত্রকে শাসন করে, পুত্র ভাবে যে পিতা কী নিষ্ঠুর। সে জানেনা যে পিতার উদ্যত বেত্রের অর্ধেকখানি পড়ে সেই পিতার‌ই পৃষ্ঠে। এক কথায়, জাহানারা প্রতিবাদ না করলে শাহজাহান বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নিতেই পারতেন না।

প্রশ্ন: দারা চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: দারা মুঘল সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ছিলেন পিতার অনুগত। তিনি ছোট ভাইদের বিদ্রোহ দমনের পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু শাহজাহান যখন স্নেহের বশবর্তী হয়ে এই বিদ্রোহ দমননীতির বিরোধিতা করলেন তখন বারবার দারা ইতস্তত করছিলেন। আবার জাহানারার প্রবল ব্যক্তিত্ব তাঁকে ‌বিদ্রোহ দমনের পক্ষে নিয়ে আসে। এইভাবে বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর দুর্বলতা ও পরমুখাপেক্ষিতা দেখা যায়। তিনি একজন সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব পালনে কতটুকু যোগ্য তা সন্দেহজনক। একবার তিনি বলেছেন, 'আমি এই সাম্রাজ্য চাই না। আমি দর্শনে উপনিষদে এর চেয়ে বড় সাম্রাজ্য পেয়েছি।' এতে বোঝা যায় যে তিনি রাজনীতি নয় বরং জ্ঞানচর্চায় বেশি আগ্রহী।

প্রশ্ন: সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

ক) কিন্তু তুইও এর মধ্যে যাসনে, তোর কাজ স্নেহ-ভক্তি-অনুকম্পা।

উত্তর: আলোচ্য অংশটি সুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'সাজাহান' নাটকের 'পিতা ও পুত্র' পাঠের অন্তর্গত। শাহজাহান জীবনের শেষ দিকে শারীরিকভাবে অক্ষম এক মুঘল সম্রাট। এই শাহজাহান এক আবেগপ্রবণ পিতা, কোন‌ও কঠিন রাজদণ্ডধারী নন। শাহজাহানের বার্ধক্য ও ক্ষমতার অভাবের সুযোগে দারাকে সন্দেহ করে বাকি তিন পুত্র নিজ নিজ স্থান থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। দারা এই বিদ্রোহ দমন করতে প্রস্তুত। কিন্তু শাজাহান স্নেহের বশবর্তী হয়ে এই দমন নীতিতে আগ্রহী নন। তিনি চান তাঁর ছেলেরা দিল্লি পৌঁছে গেলে স্নেহের মাধ্যমে বুঝিয়ে সমাধান করবেন। কিন্তু তাঁর মেয়ের প্রবল ব্যক্তিত্ব শাহজাহান ও দারাকে বিদ্রোহ দমন করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।

তাই 'সাজাহান' নাটকে জাহানারা চরিত্রের দ্বারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়েছে। জাহানারার এই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখে শাহজাহান এই উক্তি করেছেন। কন্যা হিসেবে শাহজাহান তার কাছে এই আশা করেন না, বরং তিনি চান জাহানারা নারীসুলভ কোমল মনের অধিকারী হোক। তার কাজ হোক স্নেহ, দয়া, অনুকম্পা ইত্যাদি কোমল গুণের দ্বারা প্রভাবিত। সম্রাট চান, জাহানারা যেন রাজনীতির জটিলতা ও কঠোরতা থেকে মুক্ত এক কন্যা ও বোনের ভূমিকা পালন করে।

খ) কিন্তু এ শাস্তি তাদের একার নয়।

উত্তর: আলোচ্য অংশটি সুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'সাজাহান' নাটকের 'পিতা ও পুত্র' পাঠের অন্তর্গত। বিদ্রোহী পুত্রদের দমন করতে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না সম্রাট শাহজাহান। কিন্তু রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। পিতা হিসেবে এই শাস্তি প্রদান করতে গিয়ে তিনি যে কতটুকু কষ্ট পেয়েছেন তা প্রকাশ করতে গিয়ে এই উক্তি করেছেন শাহজাহান।

    শাস্তি প্রদান অনেক কঠিন কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে একজন মানুষ বিচারক হিসেবে নিজেও কষ্ট পায়। আর এই বিচারক অর্থাৎ শাহজাহান শুধু বিচারক ও শাসক নন, তিনি একজন পিতাও বটে। তাই এই শাস্তি প্রদানের কষ্ট তাকে ব্যাকুল করেছে একজন পিতা হিসাবে।

গ্রাম্যছবি

প্রশ্ন: 'গ্রাম্যছবি' কবিতা অবলম্বনে গ্রামের প্রাকৃতিক শোভার বর্ণনা দাও।

উত্তর: 'গ্রাম্যছবি' কবিতায় কবি গীরীন্দ্রমোহিনী দাসী অত্যন্ত সুন্দরভাবে গ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন। ঘরগুলো মাটিতে নিকানো, যার দাওয়া ও উঠান পরিষ্কার সুন্দর। খড়ের চালে মাচা বেয়ে করলার লতা উঠেছে। ঘরের ভিতর পিঁজারায় কাপড় বেঁধে রাখা আছে। দাওয়াতে বিড়াল শুয়ে আছে। মঞ্চে তুলসীর গাছ, ঘরে নানা ধরনের শিল্প সংগ্রহ, দড়ির দোলনায় শুয়ে থাকা শিশু, পাখির ডাক, বাতাসের স্বনন, ঘুঘুর গান, মেঠো পথে পথিকের গান গ্রামের সৌন্দর্যে যোগ হয়। কুল গাছের ডাল নুইয়ে দুই বোন কুল পাড়ে। বাঁশবনে ঘেরা পুকুরের নির্মল জলে কলমির ফাঁকে হাঁস সাঁতার কাটে। চুলের গোছা লুটিয়ে বালা হাতে গুঁজে গ্রামীণ বধু ধান নাড়ে। মাঠে গরু চরাতে গিয়ে রাখাল গাছের নিচে শুয়ে পড়ে।

প্রশ্ন: কবি জন্মভূমিকে 'সুধাময়ী' বলেছেন কেন?

উত্তর: সুধা অর্থাৎ অমৃত এক দৈব পানীয়। এটা পান করার পর মৃত্যু স্পর্শ করতে পারেনা। কিন্তু অমৃত বা সুধা এক সুস্বাদু খাদ্য ও পানীয় বস্তুও বোঝাতে পারে।

 জন্মভূমি বঙ্গদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। তার স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশ আমাদেরকে অমৃতের স্বাদ দেয়। জটিল সংসারের জটিলতা থেকে গ্রাম্য পরিবেশ অনেকটা মুক্ত। এখানকার জল নির্মল, বাতাস শীতল সুগন্ধময়, কোলাহলশূন্য পরিবেশ পাখির ডাকে সংগীতময়। এখানকার ঘরবাড়ি সাধারণ হলেও শিল্পময় এবং প্রাচুর্যে ভরা না হলেও প্রয়োজনীয় সব পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। এই পরিবেশ বা তার স্মৃতি বা ছবি আমাদের মনকে আনন্দে ভরে তোলে। আমাদের গ্রাম প্রধান জন্মভূমি তাই সুধাময়ী।


অরুণিমা সিনহা: সাহস ও আত্মবিশ্বাসের অন্য নাম

প্রশ্ন : অরুণিমা সিনহার সংগ্রাম সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: অরুণিমা সিনহা উত্তরপ্রদেশের এক জাতীয় পর্যায়ের ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর। ২০১১ সালে লখনৌ থেকে দিল্লীগামী ট্রেনে যাত্রা করার সময় ডাকাতদের আক্রমণ ঘটে। ডাকাতরা তাঁকে ধরে চলন্ত ট্রেনের বাইরে ফেলে দেয়। এই ঘটনায় তিনি একটি পা হারিয়ে ফেলেন এবং অন্যটিকে লোহা রড লাগিয়ে কোনমতে সারিয়ে তোলা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সংকল্প করে বসেন এভারেস্ট বিজয়ের। শুভাকাঙ্ক্ষীদের নেতিবাচক পরামর্শ ও বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন অরণিমা। পর্বতারোহনের উপযোগী কৃত্রিম পা লাগাতে গেলে ৬০-৭০ হাজার টাকার দরকার ছিল। বহু কষ্টে তা জোগাড় করে উত্তর কাশিতে ইকো এভারেস্ট এক্সপিডিশন গ্রুপে যোগ দিলেন অরুণিমা। টাটা স্টিল অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন পরিচালিত ক্যাম্পে বাচেন্দ্রী পালের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন শুরু হয়। পা দিয়ে রক্ত পড়তো, দুই মিনিটের কাজে তিন ঘন্টা লাগত। কিন্তু এইসব বাধা পার হয়ে গেলেন তিনি।

লাদাখে অবস্থিত শামসের কাংরির ২১ হাজার ৭১৮ ফুট উচ্চতায় উঠে ৬৯০ ফুট বাকি থাকতেই নেমে আসতে হল তাঁদের প্রথম অভিযানে। এতে তাঁর মনোবল আরো বেড়ে যায়। অবশেষে ২০১৩ সালের ২১ মে নানা বাধা অতিক্রম করে ৫২ দিন পর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৮৮৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পৃথিবীর উচ্চতম স্থান এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণ করতে সক্ষম হন অরুণিমা।


আদরিণী


প্রশ্ন: জয়রামের চরিত্র বর্ণনা কর।

উত্তর: প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় 'আদরিণী' গল্পে একজন ব্যক্তির উত্থান ও পতনের মাধ্যমে এর অন্তর্নিহিত কারণ উপস্থাপন করেছেন। এই ব্যক্তিটির নাম জয়রাম মুখোপাধ্যায়।

কপর্দকহীন অবস্থায় জয়রাম কলকাতায় পা দেন। সামান্য একটা ঘর ভাড়া করে আদালতে মুক্তারি শুরু করেন। বড়ই জেদী ছিলেন জয় রাম। আদালতে কোনো অন্যায় দেখলে তাঁর চিৎকার চেঁচামেচি, ডেপুটির নামে বাছুরের নামকরণ, এক হাকিমের জ্ঞান নিয়ে বিদ্রুপ করায় ৫ টাকা জরিমানা এবং ১৭০০ টাকা খরচ করে আপিল করে ৫ টাকা মকুব করা, মেজবাবু তাঁর বাড়ির নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য হাতি দেননি বলে হাতি কিনে ফেলা এবং সেই হাতিতে চড়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করা, জীবনের শেষ মামলায় জয়ী হয়ে অবসর গ্ৰহণ করা ইত্যাদি এর প্রমাণ।


তিনি বড় অভিমানী ছিলেন বাইরে থেকে যেভাবে কঠিন মনে হয় ভেতরটা তাঁর ছিল ফুলের মত কোমল। তাঁর বাড়িতে প্রচুর মানুষের আগমন, আড্ডা ইত্যাদি থেকে মনে হয় তাঁর দান করার হাতটাও ছিল খোলা। তিনি যে দেদার রোজগার করতেন তার প্রমাণ হিসেবে বাড়ি, বাগান, পুকুর, কোম্পানির কাগজ ইত্যাদি সম্পত্তি রয়েছে।


কিন্তু যুগের উপযোগী শিক্ষা না থাকায় ও দূরদৃষ্টির অভাবের কারণে সন্তানদের মানুষ করতে পারেননি। জীবনযুদ্ধে তাঁর শোচনীয় পরাজয় ঘটে।


অরণ্য প্রেমিক: লবটুলিয়ার কাহিনি 


প্রশ্ন: সরস্বতী কুণ্ডীর সৌন্দর্য বর্ণনা কর।

উত্তর: লবটুলিয়ার উত্তর প্রান্তের বিশাল জলাশয়টির নাম সরস্বতী কুণ্ডী। স্বচ্ছ নীল এর জল। এর তিন দিক ঘিরে রয়েছে গভীর জঙ্গল, যেখানে বড় বড় বনস্পতির সমাগম। এর নিচে নানা ধরনের লতাপাতা ও বন্যফুলের ভিড়। একদিকে ফাঁকা, দূর পর্যন্ত নীল আকাশ ও পর্বতশ্রেণী দেখা যায়। 

এখানে লোকালয়ের পরিচিত গাছপালা বা পশুপাখি প্রায় নেই। এখানকার সৌন্দর্য অন্যরকম। বসন্তে এখানে কোকিল ডাকে না। লেখকের কথায়, 'সে যেন রুক্ষ কর্কশ ভৈরবী মূর্তি; সৌম্য, সুন্দর বটে, কিন্তু মাধুর্য হীন'।

এখানে নানা ধরনের অপরিচিত ফুলের গন্ধ আবিষ্ট করে রাখে। নানা ধরনের পরিচিত অপরিচিত পাখির কূজনে মুখরিত থাকে এই সরস্বতী কুণ্ডী। রয়েছে হরিণ ইত্যাদি পশুও।

প্রশ্ন: যুগলপ্রসাদ কে? তার কাজ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর: আজকের দিনের প্রয়োজন ও সচেতনতার নিরিখে বিচার করলে যুগলপ্রসাদকে এক বড়ো মাপের পরিবেশবিদ বলা যেতে পারে। সরস্বতী কুণ্ডীর জঙ্গলে সবার অগোচরে একান্তে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ রোপন ও এদের যত্ন করত সে। অনেক ধরনের গাছ ও ফুলের নানা তথ্য যুগলপ্রসাদের জানা ছিল। দূর দূরান্ত থেকে নানা ধরনের ফুলের বীজ সংগ্রহ করে এনে এখানে রোপন করতো যুগল প্রসাদ। সে ছিল খুবই গরীব, তার নিজের সংসার ভালোভাবে চলতো না। কিন্তু এই জঙ্গলের নানা সুগন্ধি ও সুন্দর ফুল ১০-১২ বছর ধরে যুগল প্রসাদের হাতে রোপন করা। এছাড়াও এখানকার জলাশয়ে পদ্ম ও অন্যান্য ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও তার রয়েছে।


কান্ডারী হুশিয়ার


প্রশ্ন: 'কান্ডারী হুশিয়ার' কবিতার মূলভাব বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: পরাধীনতার গ্লানি আপামর ভারতবাসীকে অতিষ্ঠ করে রেখেছিল। সব ভারতবাসীর মনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল। কিন্তু প্রবল পরাক্রমী ইংরাজ সরকারের তুলনায় ভারতবাসী ছিল অত্যন্ত দুর্বল। কিন্তু তার চাইতেও বেশি দুর্বল দিক ছিল নেতৃত্বের অভাব, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিভেদ ইত্যাদি। তাই স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বকে কবি 'কান্ডারী' বলেছেন এবং চতুর্দিকের পরিস্থিতিকে জলোচ্ছ্বাসপূর্ণ বিপদসংকুল সাগরযাত্রার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই যাত্রায় হাল ধরে বিভেদ ভুলে ভারত মায়ের মুক্তির পণকে সামনে রেখে এগিয়ে বিজয় হাসিল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।


প্রশ্ন: হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন — বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বড় অন্তরায় ছিল হিন্দু-মুসলিম বিভেদ। ব্রিটিশরাও ভারতবাসীকে বিভক্ত করে শাসন কায়েম করার চেষ্টা করেছিল। সাধারণ মানুষ, এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারাও এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। তাই কবি সাবধান করে দিচ্ছেন এই প্রশ্ন যেন না আসে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা আমাদের দেশমাতৃর মুক্তির পণ নিয়েছি এবং দেশের প্রতিটি মানুষ সেই মায়ের সন্তান।


প্রশ্ন: কান্ডারী, তব সম্মুখে ওই পলাশীর প্রান্তর — আলোচনা করো।

উত্তর: বাঙালি নানাভাবে বিভক্ত ছিল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্র করে সিরাজোদ্দৌলাকে হারিয়ে পলাশীর যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল ব্রিটিশ। আর সেই সঙ্গে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। কবির আহ্বান, এই পলাশীর যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিতে হবে পরাধীন ভারতবর্ষের বাঙালির। যেখানে হিন্দু মুসলিম নয়, বাঙালির রক্তে ইংরেজ ক্লাইভের খঞ্জর লাল হয়েছিল। তাই আবার রক্তদানের মাধ্যমে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে স্বাধীনতার সূর্যকে উদয় অচলে তুলে ধরতে হবে।


বৈচিত্র্যপূর্ণ অসম

মরাণগণ

প্রশ্ন: মরাণদের সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ

উত্তর: মরাণরা আসামের সুপ্রাচীন ও আদিম জনগোষ্ঠী। এরা কিরাত-মঙ্গোলীয় মূলের। বিভিন্ন গবেষণায় যে বারো ঘর কছারিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ইনটু মিনখঁয় হচ্ছে মরাণ। এদের প্রাচীন ভাষা বোড়োরূসী। চুকাফা আসার সময় তাদের রাজ্যের সীমা ছিল উত্তরে বুড়িদিহিং, দক্ষিণে দিসাং, পূর্বে সফ্রাই এবং পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত। মরানদের শেষ রাজা বদৌসা। মরাণ বিহু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রধান উৎসব। তাদের বাদ্যযন্ত্র ও সংগীত নৃত্যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। একজন গাঁও বুড়া, কয়েকজন বরবুড়া, যুবকদের দলপতি ইত্যাদি দ্বারা তাদের সমাজ সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন: বীরাঙ্গনা রাধা রুকুনি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর: বিখ্যাত মোয়ামরিয়া বিদ্রোহে নারীশক্তির অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। বীর রাঘব মরাণ ও নাহরখোয়া মরাণদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাহরের দুই পত্নী ভাতুকি ও ভাবুলি ওরফে রাধা রুকুনি কাজ করেন। এরা যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ও বুদ্ধিমতি ছিলেন। রাজা লক্ষ্মী সিংহের সৈন্যদের জঙ্গল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া পর রাজার সৈন্যরা আক্রমণ করলে রাধা রুকুনি তাদের পরাস্ত করেন। রমাকান্ত রাজা হওয়ার পর তাঁরা পরামর্শদাত্রী হিসেবে ছিলেন। পরবর্তীকালে ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়।


মণিপুরিগণ

প্রশ্ন: মনিপুরি জনগোষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর: বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মনিপুরিদের বসবাস। ১৮১৯ সালের মান সেনার আক্রমণে মনিপুর থেকে কাছাড়, সিলেট ইত্যাদি স্থানে মনিপুরিরা এসেছিলেন। তাদের ভাষা মীতৈলোন। এরা তিব্বতবর্মীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। মীতৈ ময়েক মনিপুরীদের নিজস্ব লিপি। ১৯১২ সালে মণিপুরী ভাষা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত হয়।

মনিপুরী সমাজ সাতটি 'য়েক ছালাই' বা গোষ্ঠীতে বিন্যস্ত। এদের উপগোষ্ঠীকে বলা হয় য়ুমনাক বা শাগৈ। প্রত্যেক শাগৈর মুরব্বিকে বলা হয় পীবা, যিনি য়ুমলাই বা গৃহদেবতার পূজায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বৈষ্ণবধর্মী হলেও তাদের আরাধ্য 'লাই নিংখৌ ছনাময়ী', 'ইমা লৈমরেন শিদবী'। 

তাদের প্রধান উৎসব 'লাই হরাওবা'। থাবল চোংবি, মাইবি জগোই নৃত্য উল্লেখযোগ্য।


রচনা 


বিহু

প্রত্যেকটি জাতির তার নিজস্ব উৎসব রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও ভাষিক জনগোষ্ঠীর নানা ধরনের উৎসব থাকে। এই উৎসব মানুষকে তার সংকীর্ণ জীবনের গণ্ডি ছেড়ে উদার মনে পরস্পর মিলনের মাধ্যমে আনন্দময় পরিবেশ গঠনে সাহায্য করে। অনেক সময় এই উৎসব উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। আসামের বিহু উৎসব এক অনন্য উৎসব, যা আসামবাসীকে এক বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।

চৈত্র মাসে শুরু হয়ে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত রঙ্গালী বিহু। এই উৎসবে একে অপরকে নিজের হাতে তৈরি গামছা উপহার দেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে মিলে সমবেত ভোজন এই উৎসবের এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। নরনারী পরস্পরের কাছে এই উৎসবের স্মৃতিকে এবং এই উৎসবে পরস্পরের প্রেম ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে চায়।

শুধু মানুষ নয়, গৃহপালিত পশুর‌ও যত্ন নেওয়া হয়। নানা ধরনের ভেষজের দ্বারা গরুকে স্নান করিয়ে নতুন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এর মাধ্যমে গো সম্পদকে নীরোগ ও কর্মক্ষম রাখার উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়। বিহু নৃত্য এই উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। নৃত্য-সঙ্গীতে প্রেম, মিলন, বিরহ, সৃষ্টি, উর্বরতা ইত্যাদি প্রকাশ পায়। লাল রঙের মেখলা পরিহিতা তরুণীরা প্রণয়ী যুবকের বাঁশির সুরে ছন্দে নেচে ওঠে।

কার্তিক মাসে রয়েছে কঙ্গালী বিহু। এই সময় চাষবাস শেষ করে মানুষ অবসর বিনোদন করে। লক্ষ্মীর নিকট শস্য সম্পদের প্রার্থনা এই উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত বিহু উৎসবকে বলা হয় ভোগালী বিহু। এই সময় শস্য ঘরে তুলে আনা হয়। এই আনন্দময় পরিবেশে নতুন ধান দিয়ে নানা ধরনের খাদ্য তৈরি করা ও খাওয়া এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।

বিহু আসামের প্রধান উৎসব। আদিম যুগের মানুষ শস্য বা খাদ্য উৎপাদনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে বিভিন্নভাবে সামাজিক আয়োজন করে প্রার্থনা করতো। বিহু যেন তারই নিদর্শন। বিহু উৎসবটিকে যতদূর সম্ভব তার স্বকীয়তা বজায় রেখে পালন করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে অন্যান্য সংস্কৃতির প্রভাব‌ও তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

শ্রীমন্ত শংকরদেব

প্রত্যেক দেশেরই রাজনৈতিক, সামাজিক, ধার্মিক, ও আত্মিক সংকটকালে পরিত্রাতা হিসাবে এক একজন ধর্মগুরু বা মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে। পঞ্চদশ শতকে অসমীয়া জীবনে মহাপুরুষ শংকরদেবের আবির্ভাব এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আসামের জনজীবনে তাঁর প্রভাব নবজাগরণের সূচনা করেছিল। তার ধর্মের মূল কথা সমন্বয়বাদ ও সর্বমানবতাবাদ। তিনি ছিলেন গৃহী-সন্ন্যাসী। শ্রীমন্ত শংকরদেবের প্রভাবে অসমীয়া ধর্মাদর্শ ও সাহিত্য নব প্রাণশক্তিতে পুষ্পিত হয়ে ওঠে । 

আহোম রাজ্যের অন্তর্গত আলিপুখুরি গ্রামে আনুমানিক ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন শংকরদেব‌। দৈহিক সৌন্দর্য ও বলবত্তার জন্য শংকরদেব বড়‌ই খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিদ্যা চর্চায় তিনি অসাধারণ মেধাশক্তির পরিচয় দেন।

তার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় হল একনিষ্ঠ আধ্যাত্ম সাধনা ও বিদ্যাচর্চার ইতিহাস। বিভিন্ন  শাস্ত্রচর্চা ও ধর্মসাধনা করে শংকরদেব এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ঈশ্বর নিরাকার, সর্বব্যাপী ও অব্যক্ত।

প্রকৃতপক্ষে শঙ্করদেব ছিলেন অনাসক্ত গৃহী। শুধু ধর্মজীবনের পরিত্রাতাই নন, তিনি অসমীয়া সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপনের জন্য‌ও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


আসামের প্রাকৃতিক সম্পদ

ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম আসাম। ‌ এই রাজ্য প্রকৃতির লীলাভূমি। এমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই যা আসামে পাওয়া যায় না। তবুও এমন অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে যা আজও আবিষ্কার করা হয়নি।

আসামের বন জঙ্গল নানা রকম গাছ পালায় ভরপুর। ‌ আসামের উল্লেখযোগ্য বনজ সম্পদ গুলি হল শাল, সেগুন ও দেবদারু। এছাড়াও কাগজ উৎপাদনের জন্য বাঁশ, দেশলাই কাঠি তৈরির জন্য শিমুল গাছ আর নানা রকম মসলা জাতীয় গাছ ইত্যাদির জন্য আসাম বিখ্যাত। আসামের পাহাড় ও বনাঞ্চলে নানা রকমের বিরল প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাঘ, ভালুক, হাতি, গন্ডার, খরগোশ, ধনেশ, ময়ূর ইত্যাদি।

খনিজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নানা ধরনের মাটি ও পাথর ছাড়াও চুন, তেল, কয়লা ইত্যাদি। জলজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে আসামের নদনদী ও এসবের মধ্যে থাকা মাছ, কাছিম ইত্যাদি।

আসামের বন জঙ্গলে যে শাল ও সেগুন পাওয়া যায় তার যথেষ্ট মূল্য আছে। এছাড়াও কয়লা পেট্রোল ও ডিজেল থেকেও যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক স্বস্তি লাভ করা যায়। পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান, কবিতরা ও মানস অভয়ারণ্য থেকেও দেশের বেশ ভালো আর্থিক মুনাফা হয়।

আসামের প্রাকৃতিক সম্পদ গুলির উন্নতির জন্য রাজ্য সরকারের উচিত যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন। সম্প্রতি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আসামের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর যেভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে তাতে সমগ্র দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমাদের এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে আরো বেশি করে আর্থিক উপার্জনের ক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলা যেতে পারে।


আসামের বন্যা ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আসমের প্রকৃতি কখনো কখনো বিরূপ হয়ে ওঠে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বন্যা সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতিকর। প্রতিবছরের আসামের এই দুঃখের কারণ শুধু একটি দুটি নদী নয়। উপত্যকার দুই পাশে থাকা অজস্র পাহাড় পর্বত থেকে নেমে আসা বৃষ্টির জল যে কোনও সময় প্লাবিত করে ফেলে ‌‌। আসাম ও তার পার্শ্ববর্তী পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিও খুব বেশি হয়। ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় অভাবনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরাক উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র শিলচর শহর এবং দুটি নদী উপত্যকার বিস্তর এলাকা।

ক্ষয়ক্ষতি: ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদীতে বছরের অর্ধেক সময় জুড়ে কয়েকবার বন্যা হয়। এর ফলে কৃষি, ব্যবসা সহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গৃহপালিত পশু ঘর বাড়ি ইত্যাদি তো নষ্ট হয়ই অনেক মানুষের প্রাণও যায়। বন্যায় পশু পাখি তথা কাজিরাঙ্গা অভয়ারণ্যের বিরল প্রাণীর মৃত্যুও হয়।

কারণ: আসামের বন্যার প্রধান কারণ অতিবৃষ্টি, নদীর নব্যতা কমে যাওয়া, জলাশয়গুলোকে সংরক্ষণ না করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্কের অভাব ইত্যাদি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্ন সময় হাতে নিলেও তা কার্যকর হয়নি। তারও অনেক কারণ রয়েছে।

উপসংহার: বন্যা প্রতিরোধ করার জন্য নদীর গহ্বর খোদাই করা বা ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে গঙ্গা নদীর সংযোগ করা ইত্যাদি জরুরি। ক্ষয়ক্ষতি কম করার জন্য বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাদ মেরামতের কাজ করা, নিচু জায়গা থেকে প্রয়োজনে মানুষ ও অন্যান্য সম্পদকে সরিয়ে নেওয়া, নিরাপদ আশ্রয় স্থান তৈরি করা ইত্যাদি জরুরি। সবচেয়ে বেশি জরুরি মানুষের সচেতনতা বাড়ানো। বৃষ্টিপাত বা বন্যা আটকানো যাবে না হয়তো, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।


ভাব সম্প্রসারণ


১) নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,

ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।

নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;

কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।

 

এই পৃথিবী এবং মানব জীবন অসম্পূর্ণতায় ভরা। আমাদের প্রাপ্তি আমাদের চাহিদার থেকে অনেক কম। তাই আমরা ভাবি এই অপ্রাপ্তি, অসম্পূর্ণতা, অতৃপ্তি ইত্যাদি শুধু আমাদেরই ভাগে পড়েছে। আমরা আক্ষেপ করি অন্যের জীবন দেখে। আমরা ভাবি অন্য সব মানুষ সুখী। পৃথিবীর যত সুখ, তৃপ্তি, সম্পূর্ণতা অন্যের ভাগেই পড়েছে। আসলে আমরা সুখ বলতে যা বুঝি তা কোনদিনই সম্পূর্ণভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমরা মানুষ; যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। আমাদের চাহিদা কোনদিনই পূর্ণ হওয়ার কথা নয়। একটা চাহিদা পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা চাহিদা অথবা আরও বেশি পাওয়ার ইচ্ছা আমাদের মনে জাগ্রত হয়। তাই সুখ আমাদের জীবনে আসে না। অন্যের প্রাপ্তি যখন আমাদের চোখে পড়ে তখন আমরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিলাপ করি। অথচ আমরা ভুলে যাই যে ওই ব্যক্তি অন্য কোনভাবে চরম অতৃপ্তির মধ্যে আছে। যার টাকা আছে সে হয়তো শারীরিক বা মানসিক কারণে সুখী নয়। যার সুস্বাস্থ্য আছে সে হয়তো পয়সার অভাবে ভুগছে। এ যেন নদীর এপার ওপার। সব সময়ই মনে হয় অন্য পারেই সব সুখ।


২) বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

মানুষ নিজের বুদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কারণে জীব শ্রেষ্ঠ। তাই এই ক্ষমতায় আত্মতৃপ্ত হয়ে মানুষ জীবজগতকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অনেক সময় আমরা নিজের সুখ বা বিলাসের জন্য অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে রুঢ় ব্যবহার করি। আমরা ভাবি একটা জঙ্গলের পাখিকে খাঁচাবন্দি অবস্থায় সুন্দর দেখায়, অথবা বনের একটি গাছকে টবের মধ্যে দেখতে আমরা পছন্দ করি। অনেক সময় গভীর জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসী মানুষকেও আমরা অমানুষ ভেবে তার উন্নয়নের নামে তাকে অসুন্দর করে তুলি।


 আমরা ভুলে যাই একটা শিশুকে ধাত্রী বা আত্মীয় স্বজন বা দোলনায় সুন্দর দেখায় না। তার সৌন্দর্য তার মায়ের কোলে। ঠিক সেই ভাবে বন্যেরা বনেই সুন্দর। কারণ অন্যত্র তার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়।




৩)

পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না, পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।


ফুল সুগন্ধ দেয়, তার সৌন্দর্য দ্বারা সমস্ত পৃথিবীর জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গকে সে আকর্ষণ করে মুগ্ধ করে রাখে। এই ফুলের কোন‌ও কিছুই তার নিজের জন্য নয়। সে ঝরে পড়ে কম সময়ে। তারপর তার এই দান বিশ্ব চরাচরকে খুশি রাখার জন্য ছড়িয়ে পড়ে।

 মানুষ হিসেবে আমরা জীব-শ্রেষ্ঠ। আমাদেরও উচিত ফুল থেকে প্রেরণা নেওয়া। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন, সঞ্চয় ও ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টায় সমস্ত জীবন কাটিয়ে দেয় মানুষ। এইসব মানুষ বড়ই আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর। মৃত্যুর পর তারা কিছুই অবশিষ্ট রাখেনা। অপরদিকে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের জীবনকে জনকল্যাণে নিয়োজিত রাখেন। তারা মরেও অমর। তাদের জীবন সার্থক। আসলে পৃথিবীতে আগমনের কিছু উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্য কখনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয় না। এই উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া ও তার সাধন করার নামই জীবন। তাই আমাদের উচিত ফুলের মতো নিজের জীবনকে ফুটিয়ে তোলা। লালনের গানের মত বলতে হয়, 'কী কাজ করিতে আইলি এ ভব সংসারের মাঝে....'


৪) পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি স্বরূপ


উত্তর: জীবনে সফলতা অর্জন করতে গেলে পরিশ্রম করতেই হয়। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কিন্তু অনেক সময় ভাগ্য অনুকূল না থাকায় পরিশ্রম কাজে লাগেনা। কিন্তু তাই বলে চেষ্টা বন্ধ করা ঠিক নয়। কারণ সফলতা অর্জন সহজ নয়। দুই একবার বিফল হলেও হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং বারবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কোনও জিনিসই সহজ পথে পাওয়া যায় না। তাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে নিজের আয়ু নষ্ট করা কোনভাবেই কাম্য নয়। পরিশ্রম করলে সফলতা অবশ্যই পাওয়া যায়। সাফল্য যত বেশি আশা করা যায় তার জন্য তত বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কথায় আছে, কষ্ট বিনা কেষ্ট মেলে না। 


৫) আলো বলে, অন্ধকার তুই বড় কালো

অন্ধকার বলে ভাই, তাই তুমি আলো

উত্তর: আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ, সুন্দর-অসুন্দর — এইসব নানা বিপরীতধর্মী অবস্থা রয়েছে। আসলে সৌন্দর্য আপেক্ষিক, দ্রষ্টার মনের উপর নির্ভর করে। একটার তুলনায় অন্যটির অস্তিত্ব নির্ভর করে। এই পৃথিবীতে যদি শুধু আলোই থাকতো আর অন্ধকার না থাকত, তাহলে আলোর কোনো মূল্য আমরা বুঝতে পারতাম না। অন্ধকার রাত্রির পরে যখন আলো দেখা দেয় তখনই তাকে সুন্দর দেখায়। ঠিক তেমনি কালো আছে বলেই সাদা বোঝা যায়। অন্ধকার বা কালো রং সম্বন্ধে আমাদের মনে নেতিবাচক ধারণা আছে। নতুবা এর মধ্যে অবহেলা বা ঘৃণা করার কিছু নেই। সৌন্দর্য মনের উপর নির্ভরশীল। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, যা মনকে আনন্দ দেয় তাকেই আমরা সুন্দর বলে থাকি।


আবার আসিব ফিরে

১) 'আমারেই ভাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে' — কবি পুনরায় জন্মগ্রহণ করে কাহাদের ভিড়ে ফিরে আসতে চান বর্ণনা করো।

উঃ: 'আবার আসিব ফিরে' কবিতায় কবির স্বদেশ ও প্রকৃতি প্রীতি, গ্রাম বাংলার নিসর্গ প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি গভীর আকর্ষণ ও নিবিড় ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।

কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রাম বাংলার মুক্ত প্রকৃতির কোলে মানুষ ও মনুষ্যেতর বিচিত্র প্রাণীদের ভিড়ের মধ্যে ফিরে আসতে আগ্রহী। নির্জনতার কবি জীবনানন্দ অবশ্য ভিড় পছন্দ করেন না। তবে এই ভিড় নগর জীবনের ভিড় নয়, যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল নেই, বরং আছে বৈচিত্রের মেলা। সেজন্য খোলামেলা প্রকৃতির কোলে এই বৈচিত্রের ভিড় কবির অপছন্দ নয়।

বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবাসেন বলে কবি ধানসিড়ির তীরে এই বাংলার বুকে ফিরে আসবেন। মানুষ বা অন্য কোন পশুপাখির রূপেও তিনি নবজন্ম গ্রহণ করতে পারেন। শঙ্খচিল, শালিক, কাঁঠাল ছায়ায় হেমন্তের ভাসমান কুয়াশা কলমির গন্ধে ভরা পুকুরের জলে সারাদিন সাঁতার কাটা হাঁস, সন্ধ্যার বাতাসে ওড়া সুদর্শন পোকা, শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকে যে লক্ষ্মী পেঁচা, উঠোনে খইয়ের ধান ছড়ায় যে মানব শিশু, রুপসা নদীর ঘোলা জলে পাল তুলে ডিঙা বায় যে কিশোর, অস্পষ্ট অন্ধকারে সূর্যাস্তের রঙে রঙিন মেঘ সাঁতার দিয়ে নীড়ে ফেরে যে বক— প্রকৃতির এই বিচিত্র প্রাণের ভিড়ে অর্থাৎ সমারোহের ভিড়েই কবি ফিরে আসতে চান।



ব্যাসবাক্য সহ সমাস লিখ

দ্বন্দ্ব সমাস
চালাকচতুর = চালাক ও চতুর
শত্রুমিত্র = শত্রু ও মিত্র
হারজিত = হার ও জিত
চালডাল = চাল ও ডাল

দ্বিগু সমাস
দশানন = দশ আনন যার
পাঁচকড়ি = পাঁচটি কড়ির বিনিময়ে ক্রীত
পঞ্চবটি = পঞ্চ বটের সমাহার

তৎপুরুষ সমাস
গাধোয়া = গাকে ধোয়া (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ)
কচুকাটা = কচুকে কাটা (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ)
দাকাটা = দা দিয়া কাটা (তৃতীয়া তৎপুরুষ)
মনগড়া = মন দিয়া গড়া (তৃতীয়া তৎপুরুষ)
বিয়েপাগল = বিয়ের জন্য পাগল (৪র্থী তৎপুরুষ)
দেবদত্ত = দেবকে দত্ত (৪র্থী তৎপুরুষ)
মৃত্যুভয় = মৃত্যু হইতে ভয় (৫মী তৎপুরুষ)
লক্ষ্মীছাড়া = লক্ষ্মী হইতে ছাড়া (৫মী তৎপুরুষ)
গঙ্গাজল = গঙ্গার জল (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ)
ছাত্রসমাজ = ছাত্রদের সমাজ (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ)
রণবীর = রণে বীর (৭মী তৎপুরুষ)
ইংরেজিশিক্ষিত = ইংরেজিতে শিক্ষিত (৭মী তৎপুরুষ)
অনশন = ন অশন (নঞ তৎপুরুষ)
নাতিশীতোষ্ণ = ন অতি শীত উষ্ণ (নঞ তৎপুরুষ)
ঘিয়েভাজা = ঘিয়ে ভাজা (অলোক তৎপুরুষ)

বাক্য সংকোচন
জানার যোগ্য বা জানতে হবে — জ্ঞাতব্য
যা কখনো ভাবা যায় না— অভাবনীয়
পতিপুত্রহীনা নারী — অবীরা
যিনি কম কথা বলেন — মিতভাষী, স্বল্পবাক
পক্ষীর কলরব — কূজন
ময়ূরের ডাক — কেকা
একই মায়ের পুত্র — সহোদর
মানুষের হাড় — মহাশঙ্খ
যিনি দার পরিগ্রহ করেন নাই — অকৃতদার
ভোজন করিবার ইচ্ছা —বুভুক্ষা
যে নারীর সম্প্রতি বিবাহ হয়েছে — নবোঢ়া
যার দু'হাত সমানে চলে — সব্যসাচী
বিচলিত মন যার — বিমনা
যে বস্তু পেতে ইচ্ছা করা যায় — ঈপ্সিত
রাত্রিকালীন যুদ্ধ — সৌপ্তিক 
রক্তবর্ণ পদ্ম — কোকনদ
কুমারীর পুত্র — কানীন
বিষ্ণুর গদা — কৌমুদকী
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খ — পাঞ্চজন্য
অস্থির শাবক — করভ
হাতি বাঁধার স্থান — পিলখানা, বারী
যা বলা যায় না — অবাচ্য
রাজা নেই যেখানে — অরাজক 
যে পরে জন্মগ্রহণ করে — অনুজ
যা দুঃখে লাভ করা যায় — দুর্লভ
বিধান করে যে — বিধায়ক
অশ্ব রাখার স্থান — মন্দুরা, আস্তাবল 
আকাশ ও পৃথিবী — ক্রন্দসী
গম্ভীর ধ্বনি — মন্দ্রা
হাতি বাঁধিবার শিকল — আন্দু 
চোখের মণি — কনীনিকা 
পিতার মতো — পিতৃসম
শ্বেত পদ্ম — পুণ্ডরীক
নীল পদ্ম — ইন্দিবর
হাতির ডাক — বৃংহণ 

Comments

Popular posts from this blog

Class IX MIL