Class IX MIL
ডাইনি
প্রশ্ন — ডাইনি প্রথা যে কুটিল সমাজেরই সৃষ্টি, এর সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর — ‘ডাইনি’ গল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ডাইনি প্রথার বিশ্বাসযোগ্যতা পাঠকের অনুমানের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এখানে ফুটে উঠেছে একটি স্বাভাবিক মেয়ের ডাইনি হয়ে ওঠার কাহিনি।
সরা নামের মেয়েটির চেহারার বৈশিষ্ট ছিল ছোট কপাল, একটু লালচে ঘন একরাশ চুল, টিকালো নাক, ছোট চোখে খয়েরি রঙের তারা, তীক্ষ্ণ চাহনি ইত্যাদি। ডাইনির কল্পিত চেহারার সঙ্গে এর যথেষ্ট মিল ছিল বলে তাকে সন্দেহ করত সবাই। ধীরে ধীরে এই সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হয়। তারপর কয়েকটি কাকতালীয় ঘটনায় এই বিশ্বাস হয়ে ওঠে সিদ্ধান্ত। সে নিজেও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সে একজন ডাইনি। এইভাবেই সমাজ একজন স্বাভাবিক মানুষকে ডাইনি বানিয়ে দেয়। আসলে ডাইনি বলে কিছু নেই।
অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রভাবে এইসব ধারণার জন্ম হয়। আজও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এইভাবেই ডাইনি হত্যার শিকার হচ্ছে মানুষ।
প্রত্যুপকার
প্রশ্ন : ‘প্রত্যুপকার’ নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর : বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক পণ্ডিত ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘প্রত্যুপকার’ গল্পটিতে আমরা উপকার ও প্রত্যুপকারের এক বিশেষ কাহিনি পাই। আলি ইবন আব্বাস খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্র ছিলেন। একবার তিনি দামাস্কাস শহরে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। শুধু আশ্রয় নয়, একমাস সময় নিরাপদে থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করেছিলেন এবং বাড়ি ফেরার সুবন্দোবস্তও করে দিয়েছিলেন। সেই মহান ব্যক্তিই ভুলবশত খলিফার আক্রোশের শিকার হয়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন। আলি সেই ব্যক্তিকে মুক্ত করে ঋণ শোধ করার সুযোগ পেয়ে গেলেন। নিজের প্রাণের বাজি রেখে তিনি তাঁকে পলায়ন করার সুযোগ দেন। কিন্তু সেই দামাস্কাসবাসী মহান ব্যক্তি সেই সুযোগ নেননি। বরং সম্ভব হলে খলিফার ভুল ভাঙিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এতেও ঝুঁকি ছিল এবং হলও তাই। খলিফা প্রচণ্ড রাগে আলিকেই মৃত্যুদণ্ডের হুমকি দেন। অনেক কষ্টে খলিফার ভুল ভাঙাতে সক্ষম হন আলি।
দামাস্কাসবাসী অপরিচিত আলিকে সাহায্য না করলেও পারতেন আর আলিও এত কৃতজ্ঞ যে তাঁর জীবনের লক্ষ্য হয়ে গেল সেই ব্যক্তির উপকারের ঋণ শোধ করা। যেহেতু এই গল্পে এই প্রত্যুপকারের কাহিনিই একমাত্র মুখ্য কথা, তাই ‘প্রত্যুপকার’ নামকরণ সার্থক।
প্রশ্ন : সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো
আমি এত নীচাশয় ও স্বার্থপর নহি যে, কিছুকাল পূর্বে, যে প্রাণের রক্ষা করিয়াছি, আপন প্রাণরক্ষার্থে এক্ষণে সেই প্রাণের বিনাশের কারণ হইব।
উত্তর : আলোচ্য অংশটি পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘প্রত্যুপকার’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
খলিফা মামুন তাঁর ঘনিষ্ট কর্মকর্তা আলি ইবন আব্বাসের হাতে এক বন্দির দায়িত্ব দেন। পরদিন তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা। আলাপচারিতায় প্রকাশ পায় যে এই বন্দিই দামাস্কাসের সেই মহান ব্যক্তি যিনি শত্রুর হাতে আক্রান্ত আলিকে নিরাপদ আশ্রয় ও বাড়ি ফেরার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। পরিচয় পেয়ে আলি সেই ব্যক্তিকে মুক্ত করে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি সেই পরামর্শ খারিজ করে দিয়ে এই উক্তি করেছেন।
যার উপকার পাওয়া গেল, প্রত্যুপকার হিসেবে তাঁর জন্য জীবন বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত সন্দেহ নেই। কিন্তু যিনি উপকার করলেন, প্রত্যুপকার পাওয়ার লোভে সেই ব্যক্তির সর্বনাশ ডেকে আনা উচিত নয়। উপকার করার পর প্রতিদান পাওয়ার আশায় যারা অপেক্ষা করেন, তাঁরা উপকারী নন, স্বার্থপর। দামাস্কাসবাসী ব্যক্তিকে সাহায্য করতে গেলে আলিকে অবশ্যই খলিফার রোষে পড়তে হত। এতে তাঁর প্রাণসংশয়ও ছিল।
গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা
প্রশ্ন — ‘গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা’ অবলম্বনে শিশু শ্রীচৈতন্যের বাল্যলীলার অনুপুঙ্খ বিবরণ দাও।
উত্তর — মুরারি গুপ্ত রচিত ‘গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা’ পদটিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাল্যলীলা অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দশটি শিশুর মতোই তিনি শিশুসুলভ আচরণ করছেন। শচী মাতার আঙিনায় হামাগুড়ি দিচ্ছেন তিনি। হাঁটা শেখার সময় মায়ের আঙুল ধরে হাঁটতে গিয়ে বার বার আছাড় খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। গলায় তাঁর বাঘনখ দুলছে, মুখ থেকে লালা বেয়ে বুকের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। তাঁর চাঁদের মতো মুখে হাসি যেন বিজলির মতো খেলে। খেলতে গিয়ে সারা তাঁর শরীর ধুলায় ভরে যায়। এই দেখে মা তাঁকে তুলতে গেলে তিনি আবার মাটিতে নেমে গড়াগড়ি শুরু করে দেন। যে শিশু সংসারের সব বাঁধন খুলে সন্ন্যাসী হবে তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করা মায়ের স্নেহের পক্ষেও সম্ভব নয়।
প্রশ্ন—‘সন্ন্যাসী হইবে গৌরহরি’—বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – মুরারি গুপ্ত রচিত ‘গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা’ পদটিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাল্যলীলা ও তাঁর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের ইঙ্গিত আছে।
আঙিনায় খেলতে গিয়ে শিশু গৌরাঙ্গের সারা শরীর ধুলায় ভরে যায়। শচী মাতার মাতৃসুলভ মন এতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তিনি এই ধুলো পরিষ্কার করার জন্য ছেলেকে কোলে তুলে নেন। কিন্তু শিশু গৌরাঙ্গ কান্নাকাটি শুরু করে মায়ের কোল থেকে নেমে আবার ধুলায় গড়াগড়ি শুরু করেন। কবি শিশু গৌরাঙ্গের এই লীলায় ভবিষ্যতের এক সন্ন্যাসীকে দেখেন। যে শিশু বড় হয়ে সংসারের সব বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করবে মায়ের আঁচল তাঁকে বেঁধে রাখতে পারে না। সত্যিই গৌরাঙ্গ মহাবিশ্বের ডাকে সন্ন্যাস গ্রহণ করে মানুষ ও সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোকে তুলে এনেছিলেন।
খাই খাই
প্রশ্ন—‘খাই খাই’ কবিতাটিতে উল্লেখ করা খাবারের তালিকা উল্লেখ করো।
উত্তর—‘খাই খাই’ কবিতায় উল্লিখিত খাবারের তালিকাটি দীর্ঘ। এর মধ্যে রয়েছে বাঙালির প্রিয় খাবার ডাল, ভাত, তরকারি, টক, ঝাল, মিষ্টি ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে জল, দুধ ও বিড়ির মতো কিছু পানীয় যা বাঙালি খাওয়া বলে থাকে। ফলাহার বলে পরিচিত দই- চিড়ে, জলযোগ নামের চা সহ নাস্তাও আছে এই তালিকায়। এছাড়াও রয়েছে মাদ্রাজিদের ঝাল, ফরাসিদের ব্যাঙ, বার্মার ঙাপ্পি, জাপানের ফড়িঙের ঘন্ট, চিনাদের আরশোলা ইত্যাদি।
আরও রয়েছে সরাসরি খাওয়া বা পান করার সঙ্গে সম্পর্ক নেই অথচ খাওয়া ক্রিয়ার ব্যবহারে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে এমন কিছু শব্দবন্ধ। যেমন কলা, সুদ, ঘুষ, হাওয়া, খাবি, খাপ, মিশ, গুলি, পাক, বেত, গালি, কিল, চড়, লাথি, ঘুসি, জুতো, গুঁতো, থতমত, তাড়া, দিন, চোট, ধমক, বকুনি, চাবুক, চুমু, নুন, বাতাস, হিমসিম, আছাড়, মোচড়, কানমলা, টোল, দোল, ঘোল, গোঁত, ডিগবাজি, ঠেলা, ধাক্কা, প্রসাদ, মাথা, মুখ, আদানুন, ভ্যাবাচাকা, কচুপোড়া, ঘন্টা ইত্যাদি।
আমরা
প্রশ্ন—‘আমরা’ কবিতাটির বিষয়বস্তু বর্ণনা করো।
উত্তর—‘আমরা’ কবিতায় ছন্দের জাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বঙ্গভূমি এক তীর্থস্বরূপ।
সাহসে শৌর্য-বীর্যে বাঙালি ইতিহাস প্রসিদ্ধ। এমনিতে সাপ ও বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয় বাঙালিকে। রঘুবংশের সঙ্গে যুদ্ধ, বিজয় সিংহের লঙ্কা বিজয়, প্রতাপাদিত্যের মোগলজয়, মগ প্রতিরোধ ইত্যাদি আরও ইতিহাস রয়েছে।
জ্ঞানচর্চায় সাংখ্যকার কপিল, অতীশ দীপঙ্কর, রঘুনাথের পক্ষধরকে হারানো, কবি জয়দেব, বিটপাল-ধীমান, শ্যাম-কম্বোজ-বরভূধর-অজন্তা ইত্যাদি বাঙালির সাধনার দলিল। তাছাড়াও রয়েছে কীর্তন ও বাউল সঙ্গীতে গভীরতার লীলা।
আধ্যাত্মিকতায় অতুলনীয় শ্রীচৈতন্যদেব ও বিবেকানন্দ। মন্বন্তরের মতো বিপদেও বাঙালি বেঁচে গেছে, কারণ বাঙালির ভগবান কুটীরবাসী মানুষ।
বিজ্ঞানে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় উল্লেখ্য। এছাড়াও বিশ্বকবি মহামিলনের গান গেয়েছেন। বিশ্বশান্তি কায়েম করতে বাঙালি অগ্রণী ভূমিকা নেবে। বাঙালি হয়ে জন্মগ্রহণ তাই সার্থক।
আত্মকথা
প্রশ্ন— দেবেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মসাধনার কথা বর্ণনা করো।
উত্তর— দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ২১ বছর বয়সে পিতামহীকে হারান। এরপর তাঁর মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তিনি বৈষয়িক চিন্তা বাদ দিয়ে আধ্যাত্মসাধনায় মগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু ঈশ্বরকে পাওয়া বা বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না। শাস্ত্রজ্ঞান ভালো করে আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে তিনি সংস্কৃত ভাষা শিক্ষায় মনোযোগ দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরতত্ত্বের গভীরে যাওয়া, শুধু অন্ধবিশ্বাস দিয়ে নয়। কিন্তু একদিকে মহাভারত, উপনিষদ ইত্যাদি ও অন্যদিকে পাশ্চাত্য দর্শন ইত্যাদি পড়েও কোনও কিনারা পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁর মনে প্রশ্ন জাগল, জ্ঞান কী। অনেক চর্চার পর তাঁর বোধ হল বাহ্য ইন্দ্রিয় দ্বারা মনের মধ্যে বাহ্য বস্তুর একটা অবভাস হয়, তা’ই জ্ঞান। অন্ধবিশ্বাস বা প্রকৃতি নির্ভরতা কোনোটিই তাঁকে ঈশ্বরকে পাওয়ার জায়গায় নিয়ে যেতে পারল না। ১৮৩৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘তত্ত্বরঞ্জিনী সভা’ যা পরে হয় ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’। ১৮৪২ সালে তিনি ব্রাহ্মসমাজের দায়িত্বভার নেন। ব্রাহ্মসমাজ তাঁকে ‘মহর্ষি’ উপাধি প্রদান করে।
আগামী
প্রশ্ন: 'আগামী' কবিতার বিষয়বস্তু লেখো।
উত্তর: কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আগামী কবিতায় শৈশব ও কৈশোরের স্বপ্ন ও বাস্তবের টানা পোড়েন অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। একটি অঙ্কুরিত বীজ ও তার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের প্রতীকে কবি তাঁর নিজের ও সমবয়সীদের মনের কথা তুলে ধরেছেন। একটি অংকুরকে দেখে নিষ্প্রাণ মনে হতে পারে। কিন্তু সেও একদিন মহীরুহে রূপান্তরিত হবে। পাতা-শাখা মেলে একদিন সেও ফুল-ফল-ছায়া দেবে। কিন্তু এই পথ সহজ নয়। ক্ষুদ্র বলে প্রতিবেশীরা তুচ্ছ জ্ঞান করবে, ঝড় আসবে, কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে সে বড় হবে। তার আহবানে সমবয়সীরাও মাথা তুলে দাঁড়াবে। এত কিছুর পরও কঠোর কুঠার নিয়ে আঘাত করতে আসবে কেউ না কেউ, যাদের সে ফুল-ফল-ছায়া দেয়।
এক কিশোরও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রচুর বাধা-অবহেলা-শত্রুতার শিকার হয়। কিন্তু তার পরেও সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং যারা তার ক্ষতি করে, তারাই তার কাছে উপকৃত হয়। কবিও তেমনি কিশোর হিসাবে অবহেলিত কিন্তু তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়, তিনিও একদিন বড় বড় কবিদের সমাজের অংশ হয়ে উঠবেন।
কবর
প্রশ্ন: 'কবর' কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।
উত্তর: পল্লী কবি জসীমউদ্দীন পাড়াগাঁয়ের এক আপনজনহারা কৃষকের মর্মবেদনা ফুটিয়ে তুলেছেন 'কবর' কবিতায়। এর মাধ্যমে তিনি অনিবার্য মৃত্যুর দার্শনিক দিকটাও তুলে ধরেছেন।
নাতির কাছে যৌবনের স্মৃতি, বিবাহিত জীবনের প্রবল আকর্ষণ, পুত্রকন্যা সহ সুন্দর পরিবার ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। তারপর একে একে স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূর মৃত্যু এবং আরো অগণিত পরিচিত মানুষের মৃত্যু দেখেছেন এই বৃদ্ধ। যেন তার শরীরটার কবরের মাটির সঙ্গে এক গভীর একাত্মতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কবরের মাটি, কাফন, কোদালের কোপে গোরস্থানের কঠিন মাটি ভেদ করা — এইসব যেন তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গ্রামীণ মুসলমান চাষীর মুখে মৃত্যুর বিভীষিকা ও বিচ্ছেদের দুঃখ অত্যন্ত সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। তাই কবিতার নাম 'মৃত্যু' না হয়ে 'কবর' হওয়াটাই যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন: সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা কর।
ক) এমনি করিয়া জানিনা কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোটখাটো তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
উত্তর: আলোচ্য অংশটি পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের রচিত 'কবর' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি এখানে একটি দাম্পত্য জীবনের প্রারম্ভিক আবেগপূর্ণ মুহূর্তের বর্ণনা করেছেন। কবিতার কথক তাঁর নাতির কাছে মৃত স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য মধুরতার বর্ণনা প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন।
তৎকালে বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল, তাই দাদি বিয়ের সময় ছিলেন নিতান্তই বালিকা। সেই বালিকাবধুর ন্যাকামি, অকারণ টান ইত্যাদি কেন দাদুকে গভীরভাবে আকর্ষণ করত। ক্ষেতে যাওয়ার সময় তিনি বারবার স্ত্রীর মুখ দেখতেন ফিরে ফিরে। স্ত্রী বাবার বাড়ি যাওয়ার পর তরমুজ বিক্রি করে তিনি সামান্য পুতির মালা ও মাজন নিয়ে শশুর বাড়ি যেতেন। এসব ছোট ছোট জিনিসেই ভরে উঠতো তাদের সোনার সংসার। এভাবে তাঁরা পরস্পর প্রেম ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সুখ-দুঃখের বৈপরীত্যে যেন হারিয়ে যেতেন।
খ) মাটিরে আমি যে বড় ভালোবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক
আয়— আয় দাদু গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।
উত্তর: আলোচ্য অংশটি পল্লীকবি জসিম উদ্দিন রচিত 'কবর' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতার কথক বৃদ্ধ তাঁর নাতির কাছে মৃত্যুর স্বরূপ উদঘাটন করার চেষ্টা করেছেন। নিজের স্ত্রী-পুত্র-পুত্রবধূ সহ অসংখ্য আপন জনের মৃত্যুর বেদনাকে তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। কবর খুঁড়তে খুঁড়তে যেন কবরের মাটির সাথে তার এক অন্তরের যোগ হয়েছে তাই বলতে এই উক্তি।
স্ত্রীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করছেন বৃদ্ধ। তাঁর সুখী দাম্পত্য, সংসার, ছোট ছোট সুখ-দুঃখে গড়া জীবন যাপনের আনন্দ ব্যাখ্যা করেছেন। সেই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে একে একে কয়েকজন আপনজনের মৃত্যুশোক। এছাড়াও এই কবরস্থানে বহু মৃত মানুষের কবর করেছেন তিনি। তাই যেন কবরের মাটির গন্ধ তার শরীরে আত্মায় লেগে আছে। তাঁর চোখের জলে কত নিষ্পাপ মৃত মুখ ভেসেছে। এইভাবে প্রিয়জনের শেষ আশ্রয় এই মাটি যেন তার প্রিয় হয়ে উঠেছে। যেন তার বুক, অন্তর, হৃদয় মাটিতে মিশে আছে। এই কান্নায় হৃদয়ের ভার কমে। নাতিও তো আপনজনের মৃত্যুশোকে বিহ্বল। তাই তার সাথে গলাগল করে কেঁদে বৃদ্ধ শোকটাকে কম করার চেষ্টা করছেন অর্থাৎ অন্তরে জমে থাকা দুঃখের ভার কম করার চেষ্টা করছেন।
ভারতবর্ষ
প্রশ্ন: সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে — আলোচনা কর।
উত্তর: ট্র্যাডিশন শব্দের অর্থ ঐতিহ্য বা পরম্পরা। ভারতবর্ষের ঐতিহ্য তার প্রাচীন সভ্যতা সংস্কৃতির নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে। লেখক এস ওয়াজেদ আলী দ্রুত পরিবর্তনশীল কলকাতা শহরের মধ্যে বিরাজমান একটি সনাতন ও চিরন্তন দৃশ্য উপস্থাপন করেছেন। পঁচিশ বছর আগে তিনি যে দোকানটি দেখে গিয়েছিলেন সেটির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভিতরেও সমস্ত দৃশ্য অবিকল রয়েছে। দোকানের সাজসজ্জা, দোকানের ভিতরের মানুষ ও তাদের কার্যকলাপ অবিকল রয়েছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন পঁচিশ বছর আগে দেখা বৃদ্ধ পরলোকগমন করেছেন, সেই মাঝবয়সি দোকানদার এখন বৃদ্ধ হয়েছেন ও কৃত্তিবাসী রামায়ণ পড়ছেন, সেই দশ বছরের ছেলে এখন মাঝ বয়সী হয়েছেন এবং তার সন্তানরা বসে রামায়ণ শুনছে। লেখকের মতে এই দৃশ্য প্রকৃত ভারতবর্ষের নিখুত ছবি।
ধুলামন্দির
প্রশ্ন: 'ধুলামন্দির' কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: ঈশ্বরকে পাওয়ায় জন্য মানুষ জীবনে অনেক কিছুই করে। একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে ঈশ্বরকে পেতে হলে পবিত্র হয়ে পবিত্র স্থানে উপাসনা করতে হয়। তাই মানুষ বদ্ধ ঘরে একাকী গোপনে সাধন ভজন আরাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করে।
কিন্তু এই ধারণাটা ভুল। ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান এবং তাঁর কাছে পবিত্র-অপবিত্র বলে কিছু নেই। সুতরাং ঈশ্বর উপাসনাস্থলে থাকেন না। তিনি কাদায়, ধুলায় যেখানে কৃষক শ্রমিকরা কাজ করে সেখানেও থাকেন। তাই ঈশ্বরকে পেতে হলে কর্মযোগ অবলম্বন করতে হয়।
মানুষ উপাসনা করে মুক্তি লাভের আশায়, কিন্তু একথা ভুলে যায় যে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ঈশ্বর নিজেই নিজ সৃষ্টি জগতের বাঁধনে বেষ্টিত আছেন।
কর্মস্থলই উপাসনাস্থল। কর্মস্থান তথাকথিত পবিত্র থাকেনা। এই উপাসনাস্থল ধুলা-কাদা-আবর্জনায় ভরা। এই জন্য এই কবিতার নাম 'ধুলামন্দির' রাখা সার্থক হয়েছে।
পিপলান্ত্রি গ্ৰাম
প্রশ্ন: 'কিরণ নিধি যোজনা' কী?
উত্তর: পরিবেশ দূষণে জেরবার পিপলান্ত্রি গ্ৰামের অন্যান্য মানুষের মতো শ্যামসুন্দর পালিওয়ালও কম বয়সে গ্ৰাম ছেড়ে পলায়ন করেন। বড় হয়ে গ্ৰামের হাল ফেরানোর অঙ্গীকার নিয়ে গ্ৰামে ফিরে কাজ শুরু করেন। গ্ৰাম প্রধান মনোনীত হন। এরই মধ্যে তার কন্যা কিরণের মৃত্যু হয়। তার নামে তিনি একটি চারাগাছ রোপণ করেন। সেই সঙ্গে নিয়ম করে দেন যে গ্ৰামে কন্যা সন্তান জন্ম হলে ১১১টি চারাগাছ রোপণ করতে হবে। এই প্রকল্পের নাম 'কিরণ নিধি যোজনা'। এর ফলে গ্ৰাম দূষণমুক্ত হয় এবং কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন: শ্যামসুন্দর পালিওয়াল গ্ৰামে যেসব নিয়ম চালু করেছিলেন তা উল্লেখ করো।
উত্তর : গ্ৰাম প্রধান হওয়ার পর শ্যামসুন্দর পালিওয়াল গ্ৰামে যেসব নিয়ম বাধ্যতামূলক করে দেন, সেগুলো হলো:
১) প্রতিটি কন্যাসন্তান জন্মের পর তার নামে ১১১ চারাগাছ রোপণ করে সেগুলোর যত্ন নিতে হবে।
২) কন্যাসন্তানকে পুত্রসন্তানের মতোই ভালোভাবে প্রতিপালন করে বড়ো করতে হবে।
৩) গাছপালা রোপণ করে প্রতিটিকে যত্ন করে বড়ো করতে হবে।
৪) কৃষিকাজ করে নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে হবে।
৫) কন্যাভ্রূণহত্যা বন্ধ করা।
৬) নারীশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
৭) বাল্যবিবাহ রোধ করা।
৮) কন্যা সন্তান জন্মের পর তার নামে ৩১ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রাখা, যার ২১ হাজার টাকা গ্ৰামবাসী চাঁদা তুলে দেবেন ও ১০ হাজার টাকা শিশুর মা-বাবা দেবেন।
৯) কেউ মারা গেলে তার স্মৃতিতে ১১ টি চারাগাছ রোপণ করতে হবে।
১০) রাখিবন্ধনের দিন মেয়েরা গাছে রশি বেঁধে আন্তরিকতা প্রকাশ করেন।
মনসামঙ্গল
প্রশ্ন: মনসামঙ্গল কবিতাটির ভাবার্থ লিখ।
উত্তর: কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী 'মনসামঙ্গল' কবিতায় বাঙালির ঐতিহ্য ও আধুনিকতাকে এক সূত্রে গাঁথার চেষ্টা করেছেন। লোক পুরাণের মনসা গাথার প্রভাব বাঙালির সামাজিক জীবনের গভীরে শিকড় বিস্তার করেছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের লোকায়ত জীবন, সুখ-দুঃখ, ব্যক্তিগত হাসি কান্না ইত্যাদি অনেক কিছু। কবি সেই সামগ্রিক প্রভাবটাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। ঘরের ছেঁড়া কাঁথা, আশেপাশে পঁচা পাটের গন্ধ, সাপের ভয়, এখানকার নারীর একান্ত ব্যক্তিগত কান্না, শিকায় ঝুলিয়ে রাখা খাদ্য, কুপিবাতি, মা মনসার ভরসায় সমর্পিত মাছ মারতে যাওয়া ছেলের মায়ের রাত-জাগা হাহাকার ইত্যাদি সবকিছু বাঙালির জনজীবন আর মনসা গাথা যেন এক করে দিয়েছে। বুকের মধ্যে এই গান যেন নতুন করে চিরদিনই বাজে কালীদহের প্রসঙ্গ ও নদীর ডহরের সঙ্গে। সায়ের ঝিয়ারি এখানে অনন্ত ভাসানে যায়।
লড়াই
প্রশ্ন: 'লড়াই' গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: 'লড়াই' গল্পটি বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। মাদকাসক্তি কীভাবে শুরু হয় এবং এর ভয়ানক পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ কীভাবে সংগ্রাম করে তা বর্ণিত হয়েছে। নির্মল অনুসন্ধান করে বের করলো সিদ্ধার্থের অপরাধ প্রবণতা ও তার কারণ। নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল নির্মলকে। কিন্তু তবুও সে গভীর আন্তরিকতা দিয়ে সিদ্ধার্থের মনে ঝড় তুলে দিয়েছিল। মা-বাবার ঝগড়া, উদাসীনতা, স্নেহের অভাব কীভাবে এক কিশোরকে অপরাধ জগতে ঠেলে দিতে পারে, কীভাবে টাকার লোভে অপরাধচক্র দুর্বল মনের ছেলে-মেয়েদের টেনে আনে ও ধরে রাখতে চায় এবং এই অপরাধচক্র থেকে বেরিয়ে আসা কত মারাত্মক লড়াই তা এই গল্পে প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে নির্মল আরেকটি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। নির্মলের সে লড়াই তার ভাগ্যের বিরুদ্ধে। মারাত্মক রোগের কারণে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে সে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবু সে কিন্তু থামেনি, লড়াই না করে হেরে যায়নি, অপরাধ জগতের হাতছানিকে মনের জোরে উড়িয়ে দিয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সে এই অবস্থায়ও অন্যের সংগ্রামে শরিক হয়েছে। তাই গল্পটির সর্বত্র লড়াই থাকায় 'লড়াই' নামকরণ সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন: নির্মল কিভাবে সিদ্ধার্থকে নেশার কবল থেকে টেনে এনেছিল বিস্তারিত বর্ণনা করো।
উত্তর: সিদ্ধার্থ তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যায় ভুগছিল। তারপর এই বিষন্নতা থেকে একে একে নেশা, চুরি ইত্যাদি অপরাধে সে জড়িয়ে পড়ে। একজন ভালো অনুসন্ধানকারীর মত নির্মল সিদ্ধার্থের ব্যক্তিগত অবস্থা এবং তার কারণ খুঁজে বের করল। তার মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। পান দোকানির সন্দেহজনক ভূমিকা সে বুঝে ফেলে। সেখান থেকে সিদ্ধার্থকে সরিয়ে নিয়ে আসতে পারে সে। প্রথমে প্রশান্তের টাকা চুরির কারণ জানতে চায় সে। তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে বলতে এক ধরনের নির্দেশ দেয় সে। এই আন্তরিক প্রশ্নে সিদ্ধার্থ ভেঙে পড়লেও কিছু প্রকাশ করেনি। বিদায়ের সময় খুব জোরে নির্মল একটা কথা বলেছিল 'তোর কী হয়েছে আমাকে বলতেই হবে সিদ্ধার্থ।' এক সপ্তাহ সিদ্ধার্থ স্কুলে যায়নি। এই কদিন সে বাড়িতেই ছিল। কারো সঙ্গে সে মেলামেশা করেনি, পান দোকানেও যায়নি। কিন্তু বারবার ওই একই আওয়াজ তার কানে বাজতে থাকে।
মা সারাদিন ঘোরাফেরা করে রাত্রে বাড়িতে আসতেন। ছেলে কেন স্কুলে যায়নি তার খবর তিনি রাখতেন না। বাবা দেখা করলেও সে ইদানিং বলে দিয়েছে দেখা না করার জন্য। কয়েকদিন পর নির্মল সিদ্ধার্থের বাড়ি খুঁজে বের করল। তার সঙ্গে কথা বলে সব জানতে পারলো। এরপর নেশার পরিবর্তে বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদির পরামর্শ দিল। সিদ্ধার্থ স্নেহের এই শেষ সম্বলটুকু হারানোর ঝুঁকি নিতে পারল না। শেষে যখন জানতে পারলো যে নির্মল কোন একটা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত, তখন সিদ্ধার্থের সমস্ত পৃথিবী যেন তোলপাড় করে দিল। সে নির্মলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো এবং এই প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য নিজের কাছে অঙ্গীকার করল।
অ্যান্টিবায়োটিক ও পেনিসিলেনের কথা
প্রশ্ন: অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের কাহিনী লিখো।
উত্তর: স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ সালে স্ট্যাফাইলোকক্কাস নামে জীবাণু নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এই জীবাণু অনেক রোগের কারণ, যাকে তিনি নিস্তেজ ও দুর্বল করার চেষ্টা করছিলেন। একদিন গবেষণাপাত্র পেট্রিডিসে কী একটা পদার্থ বাতাসে উড়ে এসে পড়ল। তিনি লক্ষ করলেন জীবাণুর উপর সবুজ রঙের ছত্রাক পড়েছে। তিনি সেটা না ফেলে প্লেটটি টেবিলের পাশে সরিয়ে রাখলেন। কয়েকদিন পর লক্ষ করলেন কক্কাস জীবাণু গলে গেছে। এই ছত্রাকটি হলো পেনিসিলিয়াম নোটেটাম। পেনিসিলিনের ব্যবহার শুরু হয় তার ১৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন: পেনিসিলিন কী? মানবজীবনে পেনিসিলিনের ভূমিকা বর্ণনা করো।
উত্তর: পেনিসিলিন বিটা ল্যাক্টাম জাতীয় এক প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক। পেনিসিলিয়াম নামক একপ্রকার ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন তৈরি হয়। মানবজীবনে পেনিসিলিনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের চারপাশে বাতাস, জল, খাদ্য ইত্যাদির মাধ্যমে নানা ধরনের জীবাণু আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকগুলো জীবাণু নানা রোগের কারণ হয়, আবার অনেক জীবাণু ক্ষতিকারক জীবাণুগুলোকে গলিয়ে দেয় বা ধ্বংস করে দেয়। পেনিসিলিন এদের মধ্যে একটি। তাই রোগ প্রতিরোধে পেনিসিলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া বর্তমানে রাসায়নিক পদ্ধতিতে এম্পিসিলিন তৈরি হয়েছে। ক্ষতিকারক জীবাণুর বৃদ্ধি বন্ধ করে আমাদেরকে রক্ষা করে এই পেনিসিলিন।
ছুটি
প্রশ্ন: ফটিকের চরিত্র বর্ণনা করো।
উঃ- ফটিক চরিত্রটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অনবদ্য চরিত্র। বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক টানাপোড়েন, সামাজিক ধারণা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি এই চরিত্রে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফটিকের বয়স তেরো-চৌদ্দ বছর। সে দুরন্ত স্বভাবের গ্রামীন পরিবশে বেড়ে ওঠা এক পিতৃহীন কিশোর। ছেলেদের সর্দার হিসেবে যত উদ্ভট খেলা তার মাথায় আসত। মাকে সে ভয় করত যদিও তবু মা-ই ছিল তার শেষ আশ্রয়। মামার বাড়ি যাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেল। অচেনা অজানা শহুরে জীবন, মামির স্নেহহীনতা ও আশংকা, স্কুলে খাপ খাওয়াতে না পারা এইসব যেন ফটিককে সবসময় আঘাত করতে শুরু করল। এই অবস্থায় তার মার প্রতি টান অনেক গুন বেড়ে গেল। ফটিকের যে বয়স সেই বয়সে বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও খাপ খাওয়ানো সম্ভব ছিল না। এই অবস্থায় মামি যখন তাকে প্রত্যাখ্যান করত তখন সমস্ত পৃথিবী যেন তার কাছে নরকের মত হয়ে যেত। এদিকে প্রকৃতি মায়ের কোলে নিজেকে সমর্পণ করে একটু মুক্তি পাওয়ার সুযোগও ছিল না। এই পরিস্থিতিতে প্রবল মানসিক যন্ত্রণায় সে বাড়ির উদ্দেশ্য অজানা পথে যাত্রা করেছিল। এরপর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
প্রশ্ন: ফটিকের মামির চরিত্র আলোচনা করো।
উঃ ফটিকের মামি নাগরিক জীবনের এক প্রতিনিধি চরিত্র। শহুরে মানুষ সাধারণত অতিথিপরায়ণ হয় না। তাই নিজের তিনটি ছেলে ছাড়া এক বাড়তি অতিথিকে তিনি আপদ হিসেবে মনে করলেন। এছাড়াও নিজের সাংসারিক বিষয়ে জ্ঞান স্বামীর চাইতে একটু বেশি এমন ধারণাও তার ছিল। এই বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরের প্রতি তার লেশমাত্র স্নেহ ছিল না। ফটিকের তোষামোদ করার প্রবণতাও তার ভালো লাগতো না। ফটিকের বই হারানোর ব্যাপারটিকেও তিনি সহজভাবে নেননি। অসুস্থ ফটিককে পুলিশ নিয়ে এলে তখনও দেখা গেল তিনি অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু এই দুশ্চিন্তাও ফটিকের প্রতি স্নেহবশত নয়, বরং এক ঝামেলা বা বিপদের আশঙ্কায় তিনি চিন্তিত ছিলেন।
বৈচিত্র্যপূর্ণ আসাম
আহোমগণ
প্রশ্ন: আহোমদের সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উত্তর: আহোমরা বর্তমান চীনের ইউনান প্রদেশের মুংমা রাজ্য থেকে আসা টাই জাতির মানুষ। চুকাফার নেতৃত্বে ত্রয়োদশ শতকে পাটকাই পর্বত অতিক্রম করে আসাম বা সৌমার রাজ্য স্থাপন করেন তারা। পূর্ব আসাম থেকে ধীরে ধীরে মানস পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে ৬০০ বছর শাসন করে তারা। টাই তাদের আদি ভাষা, কিন্তু পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়। কৃষি কাজ ও পশু পালন এদের জীবিকা ছিল। তাছাড়া গাছ মুগা, এরি মুগা, পাট পলু ইত্যাদি উৎপাদন ছিল তাদের জীবিকা। কিন্তু বর্তমানে তা বদলে গেছে। ভাত আহোমদের প্রধান খাদ্য। পানীয়র মধ্যে রয়েছে লাও বা সাজ ও চা। পূর্বপুরুষের উপাসনা, মে ডাম মে ফি, ওমফা, চাইফা ইত্যাদি পূজার প্রচলন রয়েছে। চকলং ও দেওবান এই দুই পদ্ধতিতে তাদের বিবাহ নিষ্পন্ন হয়। বুরঞ্জি চর্চা আহোমদের প্রধান সংস্কৃতি।
প্রশ্ন: লাচিত বরফুকন সম্পর্কে যা জানো সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: আসামের ইতিহাসে লাচিত বরফুকনের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর জন্ম ১৬১২ সালে। পিতা মোমাই তামুলি বরবরুয়ার সঙ্গে থেকে রাজকার্য পরিচালনার অনেক কিছুই শিখেছিলেন। তিনি ক্রমে হাঁচতি ধরা তামুলি, ঘোড়া বরুয়া, দোলীয়া বরুয়া, শিমুলগুরিয়া ফুকন ও বরফুকন পদে নিজ দক্ষতার বলে কম সময়ে উন্নতি লাভ করেন।
শিমুলগুরিয়া ফুকন থাকাকালে মীরজুমলার আক্রমণ প্রতিহত করে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। ১৬৬৭ সালের ২০ আগস্ট আহাম মোগল যুদ্ধে মোগলদের হারিয়ে দেন। তারপর মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে আসা রামসিংহের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ১৬৭১ সালের মার্চ মাসে সরাইঘাটের যুদ্ধ জয় করেন তিনি। এই যুদ্ধে অবহেলার দায়ে তিনি নিজের মামার শিরচ্ছেদ করেন। অসুস্থ অবস্থায় এই যুদ্ধজয়ের অসম্ভব সম্ভব করে কিছুদিন পর তাঁর মৃত্যু হয়।
কার্বিগণ
প্রশ্ন: কার্বিদের সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: কার্বিরা আসামের প্রাচীন জনগোষ্ঠী। বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কার্বিদের 'আসামের কলম্বাস' বলে আখ্যা দিয়েছেন। মূলত কার্বি স্বায়ত্ত পরিষদ এলাকায় তাদের বসবাস।
কার্বি পুরুষ ও নারীরা আলাদা ধরনের পোশাক পরে থাকেন। পুরুষের পে সেলেং, চই হংথর, চই লক, পহ, সেপান আবু ইত্যাদি এবং মেয়েদের পিনি, পেকক, বানকক, পিবা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে লেক হিকি, নথেংপি, নেলাংপং ইত্যাদি অলংকার।
তাদের উৎসবের মধ্যে রয়েছে সজুন, রংকের, পেং, হেমফু ইত্যাদি। প্রতি বছর ১৫-১৯ ফেব্রুয়ারি তারালাংসু ও ডিফু শহরে যুব মহোৎসব আয়োজিত হয়।
কার্বিদের পাঁচটি ফৈদ বা গোত্র আছে— টিমুং, টেরন, তেরাং, ইংহি ও ইংতি।
গড়িয়া, মরিয়া ও দেশিগণ
প্রশ্ন: গড়িয়া মরিয়া দেশিগণ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: আসামে বিভিন্ন সময়ে মুসলমান শাসকদের বা ধর্মপ্রচারকদের কারণে মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। সপ্তম শতকে তুরস্কের রাজা সৌষ্টব হাসানের চীন বিজয় করে ফেরার পথে সৈন্যদের এখানে থেকে যাওয়া, আলী মেচ নামে একজন রাজার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং তার সঙ্গে বহু প্রজার ধর্মান্তর, রাজা পৃথুর কাছে হেরে যাওয়া বখতিয়ার খিলজীর সৈন্যরা — এই সব মিলে জন্ম গড়িয়া-মরিয়া-দেশিগণের।
মূল সমাজ থেকে বাদ পড়া ধর্মান্তরিত মুসলমানদের গড়িয়া, কাঁসা-পিতলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সমাজকে মরিয়া এবং কোচ-রাজবংশী ভাষা সংস্কৃতি সম্পন্ন স্থানীয়রা দেশি মুসলমান বলে পরিচিত।
কাছাড়ের জনগোষ্ঠী
প্রশ্ন: কাছাড়ের জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
তৎকালীন কাছাড় বা বর্তমান বরাক উপত্যকাকে নৃতত্ত্বের উদ্যান বা Anthropological Garden বলে অভিহিত করেছেন নৃতত্ত্ববিদরা। এখানে নানা ধর্ম ও জাতির মানুষের বসবাস। এখানকার মূল পেশা কৃষি, এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন পেশার সঙ্গে এই এলাকার মানুষ যুক্ত আছেন। এখানে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ বাঙালি। আরও রয়েছেন মণিপুরী, ভোজপুরী, রাজবংশী, নাগা, ডিমাসা, মার, রিয়াং, খাসিয়া ইত্যাদি অনেক জনগোষ্ঠী। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি অনেক ধর্মের লোকও রয়েছেন বরাক উপত্যকায়।এদের প্রত্যেকের নিজ নিজ সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ রয়েছে।
চা জনগোষ্ঠী
প্রশ্ন: চা জনগোষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসামের চাবুয়ায় প্রথম পদ্ধতিগতভাবে চা রোপণ আরম্ভ করে। তারপর বিভিন্ন সময়ে হাজারিবাগ জেল, ছোটনাগপুর থেকে শুরু করে দালালদের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ তামিলনাড়ু ইত্যাদি এলাকা থেকে শ্রমিক সংগ্রহ হয়। বর্তমানে এই জনসংখ্যা প্রায় ষাট লাখ।
বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির মানুষ সংযোগি ভাষা হিসেবে যে ভাষা তৈরি করে তার নাম হয় বাগানিয়া। মূলত হিন্দু ও খ্রিস্টধর্মাবলম্বী এরা। করম, টুসু ও সহঁরাই এদের প্রধান উৎসব। ঝুমুর নৃত্য-গীত এই জনগোষ্ঠীর স্বকীয়।
চা-বাগানের কঠোর নিয়মে বাইরের বিশ্বকে না দেখে এখানকার মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাই কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, মাদকাসক্তি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদিতে জীবন দুর্বিষহ চা-জনগোষ্ঠীর।
চুটিয়াগণ
প্রশ্ন: চুটিয়াদের সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখো।
উত্তর: চুটিয়ারা আসামের আদি জনগোষ্ঠীদের মধ্যে অন্যতম। তাদের ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় ষষ্ঠ শতক থেকে। স্বাত সরোবরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে আসায় অথবা পবিত্র নদী অর্থে 'ছু-টি' থেকে চুটিয়া শব্দ এসেছে বলে অনুমান করা হয়। তাদের প্রাচীন রাজ্যের নাম ছিল বিদর্ভ। কেঁচাইখাতি বা তাম্রেশ্বরী দেবীর কাছে নরবলি সহযোগে পূজা করত তারা, যা পরে বন্ধ হয়ে যায়। স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পে এমনকি যুদ্ধকলায় তারা যে নিপুণ ছিল তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় 'সাতসরী অসম বুরঞ্জি'তে।
ঠেঙাল কছারি
প্রশ্ন: ঠেঙাল কছারিদের সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখো।
উত্তর: ঠেঙাল কছারিরা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর বোড়ো গোষ্ঠীর পূর্ব শাখা থেকে এসেছে। এদেরকে 'কিরাত' বলেও অভিহিত করা হত। মহাভারতের তৃতীয় পাণ্ডব ভীম ও হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচের বংশধর বলেও অনেকে মনে করেন। তাদের রাজ্যের নাম হিড়িম্বা বা হেড়েম্বা এবং রাজধানীর নাম ছিল হিরিম্বাপুর। তাদের রাজা জঙ বাহাদুরের সৈন্যরা পাজামা বা ঠেঙা পরত, সেই থেকেই ঠেঙাল নাম এসেছে। তাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। তাদের মূল ধর্ম 'কৈরাতজ'। তারা মূলত কৃষিজীবী। 'হাউরি' প্রথা বা একজোট হয়ে বসবাস ও কাজ করা তাদের রীতি। ভাত, শুটকি, শুকনো মাংস এদের প্রধান খাদ্য। মেয়েরা মেখেলা ও মেঠনি পরে। হস্তশিল্পে এরা দক্ষ। তারা মূলত অসমীয়া ভাষা ব্যবহার করে। বিয়ের ব্যাপারে এদের চারটি প্রথা প্রচলিত আছে।
রচনা
বিহু
প্রত্যেকটি জাতির তার নিজস্ব উৎসব রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও ভাষিক জনগোষ্ঠীর নানা ধরনের উৎসব থাকে। এই উৎসব মানুষকে তার সংকীর্ণ জীবনের গণ্ডি ছেড়ে উদার মনে পরস্পর মিলনের মাধ্যমে আনন্দময় পরিবেশ গঠনে সাহায্য করে। অনেক সময় এই উৎসব উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। আসামের বিহু উৎসব এক অনন্য উৎসব, যা আসামবাসীকে এক বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।
চৈত্র মাসে শুরু হয়ে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত রঙ্গালী বিহু। এই উৎসবে একে অপরকে নিজের হাতে তৈরি গামছা উপহার দেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে মিলে সমবেত ভোজন এই উৎসবের এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। নরনারী পরস্পরের কাছে এই উৎসবের স্মৃতিকে এবং এই উৎসবে পরস্পরের প্রেম ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে চায়।
শুধু মানুষ নয়, গৃহপালিত পশুরও যত্ন নেওয়া হয়। নানা ধরনের ভেষজের দ্বারা গরুকে স্নান করিয়ে নতুন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এর মাধ্যমে গো সম্পদকে নীরোগ ও কর্মক্ষম রাখার উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়। বিহু নৃত্য এই উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। নৃত্য-সঙ্গীতে প্রেম, মিলন, বিরহ, সৃষ্টি, উর্বরতা ইত্যাদি প্রকাশ পায়। লাল রঙের মেখলা পরিহিতা তরুণীরা প্রণয়ী যুবকের বাঁশির সুরে ছন্দে নেচে ওঠে।
কার্তিক মাসে রয়েছে কঙ্গালী বিহু। এই সময় চাষবাস শেষ করে মানুষ অবসর বিনোদন করে। লক্ষ্মীর নিকট শস্য সম্পদের প্রার্থনা এই উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত বিহু উৎসবকে বলা হয় ভোগালী বিহু। এই সময় শস্য ঘরে তুলে আনা হয়। এই আনন্দময় পরিবেশে নতুন ধান দিয়ে নানা ধরনের খাদ্য তৈরি করা ও খাওয়া এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বিহু আসামের প্রধান উৎসব। আদিম যুগের মানুষ শস্য বা খাদ্য উৎপাদনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে বিভিন্নভাবে সামাজিক আয়োজন করে প্রার্থনা করতো। বিহু যেন তারই নিদর্শন। বিহু উৎসবটিকে যতদূর সম্ভব তার স্বকীয়তা বজায় রেখে পালন করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে অন্যান্য সংস্কৃতির প্রভাবও তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।
শ্রীমন্ত শংকর দেব
প্রত্যেক দেশেরই রাজনৈতিক, সামাজিক, ধার্মিক, ও আত্মিক সংকটকালে পরিত্রাতা হিসাবে এক একজন ধর্মগুরু বা মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে। পঞ্চদশ শতকে অসমীয়া জীবনে মহাপুরুষ শংকরদেবের আবির্ভাব এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আসামের জনজীবনে তাঁর প্রভাব নবজাগরণের সূচনা করেছিল। তার ধর্মের মূল কথা সমন্বয়বাদ ও সর্বমানবতাবাদ। তিনি ছিলেন গৃহী-সন্ন্যাসী। শ্রীমন্ত শংকরদেবের প্রভাবে অসমীয়া ধর্মাদর্শ ও সাহিত্য নব প্রাণশক্তিতে পুষ্পিত হয়ে ওঠে ।
আহোম রাজ্যের অন্তর্গত আলিপুখুরি গ্রামে আনুমানিক ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন শংকরদেব। দৈহিক সৌন্দর্য ও বলবত্তার জন্য শংকরদেব বড়ই খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিদ্যা চর্চায় তিনি অসাধারণ মেধাশক্তির পরিচয় দেন।
তার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় হল একনিষ্ঠ আধ্যাত্ম সাধনা ও বিদ্যাচর্চার ইতিহাস। বিভিন্ন শাস্ত্রচর্চা ও ধর্মসাধনা করে শংকরদেব এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ঈশ্বর নিরাকার, সর্বব্যাপী ও অব্যক্ত।
প্রকৃতপক্ষে শঙ্করদেব ছিলেন অনাসক্ত গৃহী। শুধু ধর্মজীবনের পরিত্রাতাই নন, তিনি অসমীয়া সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপনের জন্যও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আসামের প্রাকৃতিক সম্পদ
ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম আসাম। এই রাজ্য প্রকৃতির লীলাভূমি। এমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই যা আসামে পাওয়া যায় না। তবুও এমন অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে যা আজও আবিষ্কার করা হয়নি।
আসামের বন জঙ্গল নানা রকম গাছ পালায় ভরপুর। আসামের উল্লেখযোগ্য বনজ সম্পদ গুলি হল শাল, সেগুন ও দেবদারু। এছাড়াও কাগজ উৎপাদনের জন্য বাঁশ, দেশলাই কাঠি তৈরির জন্য শিমুল গাছ আর নানা রকম মসলা জাতীয় গাছ ইত্যাদির জন্য আসাম বিখ্যাত। আসামের পাহাড় ও বনাঞ্চলে নানা রকমের বিরল প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাঘ, ভালুক, হাতি, গন্ডার, খরগোশ, ধনেশ, ময়ূর ইত্যাদি।
খনিজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নানা ধরনের মাটি ও পাথর ছাড়াও চুন, তেল, কয়লা ইত্যাদি। জলজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে আসামের নদনদী ও এসবের মধ্যে থাকা মাছ, কাছিম ইত্যাদি।
আসামের বন জঙ্গলে যে শাল ও সেগুন পাওয়া যায় তার যথেষ্ট মূল্য আছে। এছাড়াও কয়লা পেট্রোল ও ডিজেল থেকেও যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক স্বস্তি লাভ করা যায়। পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান, কবিতরা ও মানস অভয়ারণ্য থেকেও দেশের বেশ ভালো আর্থিক মুনাফা হয়।
আসামের প্রাকৃতিক সম্পদ গুলির উন্নতির জন্য রাজ্য সরকারের উচিত যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন। সম্প্রতি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আসামের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর যেভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে তাতে সমগ্র দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমাদের এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে আরো বেশি করে আর্থিক উপার্জনের ক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলা যেতে পারে।
আসামের বন্যা ও তার প্রতিকার
ভূমিকা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আসমের প্রকৃতি কখনো কখনো বিরূপ হয়ে ওঠে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বন্যা সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতিকর। প্রতিবছরের আসামের এই দুঃখের কারণ শুধু একটি দুটি নদী নয়। উপত্যকার দুই পাশে থাকা অজস্র পাহাড় পর্বত থেকে নেমে আসা বৃষ্টির জল যে কোনও সময় প্লাবিত করে ফেলে । আসাম ও তার পার্শ্ববর্তী পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিও খুব বেশি হয়। ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় অভাবনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরাক উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র শিলচর শহর এবং দুটি নদী উপত্যকার বিস্তর এলাকা।
ক্ষয়ক্ষতি: ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদীতে বছরের অর্ধেক সময় জুড়ে কয়েকবার বন্যা হয়। এর ফলে কৃষি, ব্যবসা সহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গৃহপালিত পশু ঘর বাড়ি ইত্যাদি তো নষ্ট হয়ই অনেক মানুষের প্রাণও যায়। বন্যায় পশু পাখি তথা কাজিরাঙ্গা অভয়ারণ্যের বিরল প্রাণীর মৃত্যুও হয়।
কারণ: আসামের বন্যার প্রধান কারণ অতিবৃষ্টি, নদীর নব্যতা কমে যাওয়া, জলাশয়গুলোকে সংরক্ষণ না করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্কের অভাব ইত্যাদি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্ন সময় হাতে নিলেও তা কার্যকর হয়নি। তারও অনেক কারণ রয়েছে।
উপসংহার: বন্যা প্রতিরোধ করার জন্য নদীর গহ্বর খোদাই করা বা ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে গঙ্গা নদীর সংযোগ করা ইত্যাদি জরুরি। ক্ষয়ক্ষতি কম করার জন্য বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাদ মেরামতের কাজ করা, নিচু জায়গা থেকে প্রয়োজনে মানুষ ও অন্যান্য সম্পদকে সরিয়ে নেওয়া, নিরাপদ আশ্রয় স্থান তৈরি করা ইত্যাদি জরুরি। সবচেয়ে বেশি জরুরি মানুষের সচেতনতা বাড়ানো। বৃষ্টিপাত বা বন্যা আটকানো যাবে না হয়তো, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
তোমার প্রিয় গ্রন্থ
খুব বেশি বই পড়া হয়নি এখনো। তবুও যেসব বই পড়েছি তার মধ্যে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা 'বিষবৃক্ষ' উপন্যাস আমার ভালো লেগেছে। কাহিনী, চরিত্র, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। এমনিতে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় যে বিন্যাস পাওয়া যায় তা অন্যত্র দুর্লভ। তবে কিছু ইচ্ছাকৃত ত্রুটি এই উপন্যাসের কাহিনীকে অন্য পথে পরিচালিত করেছে।
নগেন্দ্রর ভ্রমণ, কুন্দনন্দিনীর সর্বহারা হওয়া, নগেন্দ্রর সঙ্গে কুন্দের পরিচয়, কুন্দের বিবাহ, নগেন্দ্রর বাড়িতে তার আশ্রয় গ্রহণ, কুন্দ ও নগেন্দ্রর প্রেম এই পর্যন্ত যে বৃত্ত রচনা করেছিলেন লেখক তা অনন্য। কিন্তু সূর্যমুখী ও কুন্দনন্দিনীর মধ্যে কাকে রাখবেন এই টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত জোর করে কুন্দনন্দিনীকে হত্যা করলেন লেখক। আসলে কুন্দ আত্মহত্যা করেনি। কাহিনী যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তাতে কুন্দ-নগেন্দ্রর মিলন হওয়া স্বাভাবিকই ছিল। যেহেতু কুন্দ বিধবা, তাই বিধবা বিবাহের বিরোধী বঙ্কিম তা হতে দিলেন না।
প্রতিটি চরিত্র চিত্রণ ও সৌন্দর্যের বর্ণনা নিখুঁত। নগেন্দ্র, কুন্দনন্দিনী, সূর্যমুখী, কমলমণি, শ্রীশচন্দ্র সব চরিত্রই নিজ নিজ মহিমায় উজ্জ্বল।
এই উপন্যাসে সমাজের নানা দিক ফুটে উঠেছে। পতনের পথে একসময়ের জমিদারবাড়ি এবং তার উত্তরাধিকারীদের বিপন্ন অবস্থা, সাহেবের সঙ্গে থেকে চালাকির জোরে কিছু উঠতি ধনী, বিধবা মেয়েদের জীবনের করুণ পরিস্থিতি ইত্যাদি নানা দিক ফুটে উঠেছে।
বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম সফল বাংলা ঔপন্যাসিক। তার মনে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞান পরস্পর বিরোধী অবস্থানে সঞ্চিত ছিল। তাই কুন্দনন্দিনীর প্রাপ্তিকে তিনি মেনে নিতে পারলেও প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি। তাই সামাজিক দায়িত্ববোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাঁর কলম কুন্দনন্দিনীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
(২০২১)
ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
মানুষের জীবনে বিভিন্ন পর্যায় আসে এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবন যেমন কষ্টকর, তেমনি আনন্দদায়কও বটে। ছাত্র জীবনের দায়িত্ব কী এবং কীই বা এর কর্তব্য – এ সম্বন্ধে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। অনেকে মনে করেন শুধু অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আবার কেউ ভাবেন পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি।
অধ্যয়ন: প্রাচীন ভারতে প্রচলিত এক শ্লোক আছে, 'ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ।' অর্থাৎ ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা হলো অধ্যয়ন বা পড়াশোনা। এই উদ্দেশ্যে গুরুগৃহে থেকে কঠোর সাধনা করতো শিষ্যরা। আধুনিক যুগেও এ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। ছাত্রদের সব বিষয়ে পারদর্শী করার চেষ্টায় তাদেরকে করে তোলা হয় jack of all trades but master of none । তাই ছাত্রদের অন্যান্য কাজে সময় ব্যয় না করে পুঁথিগত জ্ঞান অর্জন করা উচিত। কারণ এই বইগুলো বহু শতাব্দীর অভিজ্ঞতার সঞ্চয়। অনেক সফল মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি এই বইপত্র। পেশাদার জীবনে অধ্যয়নের তেমন সুযোগ থাকে না, তাই শিক্ষার্থীদের উচিত নিবিড়ভাবে শুধু অধ্যয়নে নিমগ্ন থাকা।
দক্ষতা অর্জন: পেশাদার জীবনে পা রাখার আগে তার খুঁটিনাটি জেনে রাখা ভালো। সেই হিসেবে এর উপযুক্ত সময় ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনেই এর প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব। ব্যক্তিগত পেশা বা রাজনৈতিক-সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তুলতে হবে। নতুবা ভবিষ্যৎ সমাজ অন্ধকার হয়ে পড়বে। তাই বই পড়া, খেলাধুলা, ব্যায়াম , ছাত্র রাজনীতি, সমাজকর্ম ইত্যাদিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। প্রাচীনকালের গুরুগৃহের শিক্ষাকেও নেহাত পুঁথিগত বিদ্যা বলা যায় না; কারণ সেখানেও বহু বৈষয়িক ব্যাপারেও হাতে খড়ি দেওয়া হতো।
উপসংহার: এই বিতর্ক নতুন নয়, এর সমাধানও সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষানীতি ও প্লেটো থেকে শুরু করে বর্তমান যুগের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদরা সব বিষয়ে দখল গড়ে তোলার উপরে জোর দিয়েছেন। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও উচিত বইয়ের বাইরে গিয়ে নানা ধরনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করা। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন মূল বিষয় অধ্যয়নে অবহেলা না করা হয়।
২০২২
আমার জীবনের লক্ষ্য
প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে একটি উদ্দেশ্য থাকা দরকার। লক্ষ্যহীন জীবন আর দাঁড়বিহীন নৌকা একই। এ ধরনের জীবন কোনও সঠিক দিশা পায় না। তাই মাঝপথে হারিয়ে যায়। লক্ষ্য নানা ধরনের হতে পারে। অনেক ধরনের কাজ করলেও জীবনের লক্ষ্য একটিই হওয়া দরকার। আমার জীবনের লক্ষ্য সমাজকর্মী হওয়া।
আমরা যে কাজই করি না কেন তা সমাজের কল্যাণের জন্য করি। 'You have to serve somebody' বব্ ডিলানের এই গানটিতে একথাই পরিষ্কার হয়ে যায়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক, ব্যবসায়ী যাই হই না কেন আমরা মানুষেরই সেবা করি। তাই আমি সরাসরি সমাজকর্মীই হতে চাই। তবে মনে রাখতে হবে যে সমাজকর্ম ও সমাজসেবা সম্পূর্ণ এক নয়। সমাজকর্ম এক পেশা।
সমাজকর্মী হওয়ার জন্য বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা দরকার। তাই আমি ঠিক করেছি উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হব। সেখান থেকে বিএসডব্ল্যু ও এমএসডব্ল্যু ডিগ্রী নেব। তার জন্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয় বা টিসকোতে পড়াশোনা করব। তারপর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করব। ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার ইচ্ছা আমার আছে।
আমি চাই এমন একটি সংস্থা গঠন করতে যা আমার দেশের এমন কি সমস্ত পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে। আমি আমার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশের যুবশক্তি ও জনশক্তিকে সংগঠিত করব। এভাবে পেশাদারী মনোবৃত্তি নিয়ে সমাজের কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করতে চাই। বিশেষ করে মহিলাদের উপর অত্যাচার, বঞ্চনা, নির্যাতন ইত্যাদি নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করব। কারণ আমাদের দেশে এখনো মহিলাদের মানুষ বলে ভাবা হয় না।
আমার এই লক্ষ্য সমাজে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কথায় বলে 'Successful persons don't do different things, but they do a thing differently'। আমিও তাই চাই আমার জীবনের সব কাজ এই একটি লক্ষ্যেই হোক।
২০২২
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োজন
আমাদের ঘুম থেকে উঠেই দরকার মুখ ধোয়া, নাস্তা খাওয়া, শৌচালয়, স্নান ইত্যাদি। সারাদিন নানা ব্যস্ততা, রোজগারের ইঁদুর দৌড়, তারপর ঘরে এসে দৈনন্দিন কাজ করে ঘুমিয়ে পড়া – এই সমস্ত কিছুতেই বিজ্ঞান ছাড়া আমরা চিন্তাই করতে পারি না আজকাল। আধুনিক বিজ্ঞানের উপর আমরা প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
আমাদের মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। এই তিনটিতে আজকাল বিজ্ঞান ছাড়া আমরা চিন্তা করতে পারিনা। বীজ তৈরি থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা এবং প্রক্রিয়াজাত করা সবকিছুতেই বিজ্ঞানের প্রয়োজন। এমনকি রান্না পর্যন্ত বিজ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়। আর বস্ত্রের কাঁচামাল থেকে শুরু করে তা পরিধানের উপযুক্ত করে তোলা পর্যন্ত বিজ্ঞানেরই প্রয়োজন। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাসস্থানের উপকরণ তৈরি হয় এবং বাসস্থান নির্মাণের জন্য নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার আজকাল সর্বত্র হয়ে আসছে।
আমাদের পরবর্তী প্রয়োজন স্বাস্থ্য। নানা ধরনের মহামারী থেকে রক্ষা পেতে টিকার ব্যবহার, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার, শল্য চিকিৎসা, ওষুধপত্র সবকিছুই আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে উন্নত এবং কার্যকরী হয়ে উঠেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার প্রশ্নাতীত। কালির ব্যবহার, মুদ্রণ যন্ত্রের ব্যবহার এবং বর্তমানে কম্পিউটার-ইন্টারনেটের ব্যবহারের কারণে শিক্ষা অনেকটা হাতের নাগালে এসে গেছে।
এছাড়াও দাঁত মাজন থেকে শুরু করে বিছানা পর্যন্ত বিজ্ঞানের ব্যবহার করে থাকি। আমাদের যোগাযোগ, যাতায়াত, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান অপরিহার্য।
বিজ্ঞানের ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে এতটাই বেড়েছে যে মানুষ এখন প্রাচীন যুগের প্রাকৃতিক উপকরণের দিকে ফিরে তাকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনোকিছুই ঠিক আগের মত ফিরে আসতে পারে না। তাই বিজ্ঞানের ব্যবহার আমরা বাদ দিতে পারব না, কিন্তু প্রকৃতির সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিজ্ঞানের ব্যবহার করা এখন সময়ের ডাক।
ভাব সম্প্রসারণ
১) নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।
এই পৃথিবী এবং মানব জীবন অসম্পূর্ণতায় ভরা। আমাদের প্রাপ্তি আমাদের চাহিদার থেকে অনেক কম। তাই আমরা ভাবি এই অপ্রাপ্তি, অসম্পূর্ণতা, অতৃপ্তি ইত্যাদি শুধু আমাদেরই ভাগে পড়েছে। আমরা আক্ষেপ করি অন্যের জীবন দেখে। আমরা ভাবি অন্য সব মানুষ সুখী। পৃথিবীর যত সুখ, তৃপ্তি, সম্পূর্ণতা অন্যের ভাগেই পড়েছে। আসলে আমরা সুখ বলতে যা বুঝি তা কোনদিনই সম্পূর্ণভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমরা মানুষ; যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। আমাদের চাহিদা কোনদিনই পূর্ণ হওয়ার কথা নয়। একটা চাহিদা পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা চাহিদা অথবা আরও বেশি পাওয়ার ইচ্ছা আমাদের মনে জাগ্রত হয়। তাই সুখ আমাদের জীবনে আসে না। অন্যের প্রাপ্তি যখন আমাদের চোখে পড়ে তখন আমরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিলাপ করি। অথচ আমরা ভুলে যাই যে ওই ব্যক্তি অন্য কোনভাবে চরম অতৃপ্তির মধ্যে আছে। যার টাকা আছে সে হয়তো শারীরিক বা মানসিক কারণে সুখী নয়। যার সুস্বাস্থ্য আছে সে হয়তো পয়সার অভাবে ভুগছে। এ যেন নদীর এপার ওপার। সব সময়ই মনে হয় অন্য পারেই সব সুখ।
২)
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
মানুষ নিজের বুদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কারণে জীব শ্রেষ্ঠ। তাই এই ক্ষমতায় আত্মতৃপ্ত হয়ে মানুষ জীবজগতকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অনেক সময় আমরা নিজের সুখ বা বিলাসের জন্য অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে রুঢ় ব্যবহার করি। আমরা ভাবি একটা জঙ্গলের পাখিকে খাঁচাবন্দি অবস্থায় সুন্দর দেখায়, অথবা বনের একটি গাছকে টবের মধ্যে দেখতে আমরা পছন্দ করি। অনেক সময় গভীর জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসী মানুষকেও আমরা অমানুষ ভেবে তার উন্নয়নের নামে তাকে অসুন্দর করে তুলি।
আমরা ভুলে যাই একটা শিশুকে ধাত্রী বা আত্মীয় স্বজন বা দোলনায় সুন্দর দেখায় না। তার সৌন্দর্য তার মায়ের কোলে। ঠিক সেই ভাবে বন্যেরা বনেই সুন্দর। কারণ অন্যত্র তার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়।
৩)
পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না, পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।
ফুল সুগন্ধ দেয়, তার সৌন্দর্য দ্বারা সমস্ত পৃথিবীর জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গকে সে আকর্ষণ করে মুগ্ধ করে রাখে। এই ফুলের কোনও কিছুই তার নিজের জন্য নয়। সে ঝরে পড়ে কম সময়ে। তারপর তার এই দান বিশ্ব চরাচরকে খুশি রাখার জন্য ছড়িয়ে পড়ে।
মানুষ হিসেবে আমরা জীব-শ্রেষ্ঠ। আমাদেরও উচিত ফুল থেকে প্রেরণা নেওয়া। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন, সঞ্চয় ও ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টায় সমস্ত জীবন কাটিয়ে দেয় মানুষ। এইসব মানুষ বড়ই আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর। মৃত্যুর পর তারা কিছুই অবশিষ্ট রাখেনা। অপরদিকে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের জীবনকে জনকল্যাণে নিয়োজিত রাখেন। তারা মরেও অমর। তাদের জীবন সার্থক। আসলে পৃথিবীতে আগমনের কিছু উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্য কখনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয় না। এই উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া ও তার সাধন করার নামই জীবন। তাই আমাদের উচিত ফুলের মতো নিজের জীবনকে ফুটিয়ে তোলা। লালনের গানের মত বলতে হয়, 'কী কাজ করিতে আইলি এ ভব সংসারের মাঝে....'
৪) পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি স্বরূপ
উত্তর: জীবনে সফলতা অর্জন করতে গেলে পরিশ্রম করতেই হয়। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কিন্তু অনেক সময় ভাগ্য অনুকূল না থাকায় পরিশ্রম কাজে লাগেনা। কিন্তু তাই বলে চেষ্টা বন্ধ করা ঠিক নয়। কারণ সফলতা অর্জন সহজ নয়। দুই একবার বিফল হলেও হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং বারবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কোনও জিনিসই সহজ পথে পাওয়া যায় না। তাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে নিজের আয়ু নষ্ট করা কোনভাবেই কাম্য নয়। পরিশ্রম করলে সফলতা অবশ্যই পাওয়া যায়। সাফল্য যত বেশি আশা করা যায় তার জন্য তত বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কষ্ট বিনা কেষ্ট মেলে না।
৫) আলো বলে, অন্ধকার তুই বড় কালো অন্ধকার বলে ভাই, তাই তুমি আলো
ঊত্তর: আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ, সুন্দর-অসুন্দর — এইসব নানা বিপরীতধর্মী অবস্থা রয়েছে। আসলে সৌন্দর্য আপেক্ষিক, গ্রহীতার মনের উপর নির্ভর করে। একটার তুলনায় অন্যটির অস্তিত্ব নির্ভর করে। এই পৃথিবীতে যদি শুধু আলোই থাকতো, অন্ধকার থাকত না, তাহলে আলোর কোনো মূল্য আমরা বুঝতে পারতাম না। অন্ধকার রাত্রির পরে যখন আলো দেখা দেয় তখনই তাকে সুন্দর দেখায়। ঠিক তেমনি কালো আছে বলেই সাদা বোঝা যায়। অন্ধকার বা কালো রং সম্বন্ধে আমাদের মনে নেতিবাচক ধারণা আছে। নতুবা এর মধ্যে অবহেলা বা ঘৃণা করার কিছু নেই। সৌন্দর্য মনের উপর নির্ভরশীল। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, যা মনকে আনন্দ দেয় তাকেই আমরা সুন্দর বলে
থাকি।
সন্ধি
স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্যে কিছু ফর্মুলা বা সূত্র এখানে তুলে ধরা হল।
১) বর্গের ১ম বর্ণ + স্বরধ্বনি = ৩য় বর্ণ + স্বরধ্বনি
যেমন, দিক + অন্ত = দিগন্ত ক্ + অ = গ্ + অ
ষট + আনন = ষড়ানন ট্ + আ = ড়্ + আ
নিজন্ত, সদুপায়, সুবন্ত ইতাদি
২) স্বরধ্বনি + ছ = স্বরধ্বনি + চ্ছ
যেমন, তরু + ছায়া = তরুচ্ছায়া উ + ছ = উ + চ্ছ
পরিচ্ছদ, আচ্ছাদন, প্রচ্ছন্ন ইত্যাদি
৩) ত্/দ্ + চ/ছ = চ্ + চ/ছ
যেমন, চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র ত্ + চ = চ্চ
বিপদ + চয় = বিপচ্চয় দ্ + চ = চ্চ
উচ্ছেদ, সচ্চিদানন্দ ইতাদি
৪) ত্/দ্ + জ/ঝ = জ্জ/জ্ঝ
যেমন, সৎ + জন = সজ্জন ত্ + জ = জ্জ
কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা ত্ + ঝ = জ্ঝ
উজ্জ্বল, যাবজ্জীবন ইতাদি
৫) ত্ + ট/ঠ = ট্ট (ট্ +ট)
যেমন, বৃহৎ + টীকা = বৃহট্টীকা ত্ + ট = ট্ট
৬) ত্ + ড/ঢ = ড্ড (ড+ড)
যেমন, উৎ + ডীন = উড্ডীন ত্ + ড = ড্ড
৭) ত্/দ + ল = ল্ল (ল্ + ল)
যেমন, উৎ + লাস = উল্লাস ৎ + ল = ল্ল
৮) ত্/দ্ + হ = দ্ + ধ (দ্ধ)
যেমন, উৎ + হত = উদ্ধত ৎ + হ = দ্ধ
৯) ত্/দ্ + শ = চ্ + ছ (চ্ছ)
যেমন, উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস ৎ + শ = চ্ছ
১০) ত্/দ্ + ন/ম = ন + ন/ম
যেমন, জগৎ + নাথ = জগন্নাথ ৎ + ন = ন্ন
তদ + নিমিত্ত = তন্নিমিত্ত ৎ + ন = ন্ন
মৃৎ + ময় = মৃন্ময় ৎ + ম = ন্ম
১১) উৎ + স্থা = উৎ + থা (স্ লোপ)
যেমন, উৎ + স্থান = উত্থান ৎ + স্ + থ = ত্ + থ (ত্থ)
১২) দ/ধ + ক/প = ৎ + ক/প
যেমন, হৃদ + কমল = হৃৎকমল
ক্ষুধ্ + পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা
১২) চ/জ + ন = চ/জ + ঞ
যেমন, যাচ্ + না = যাচ্ঞা চ্ + ন = চ্ঞ
যজ্ + ন = যজ্ঞ জ্ + ন = জ + ঞ (জ্ঞ)
১৩) ক্ + ন/ম = ঙ্ + ন/ম (১ম বর্ণ > ৫ম বর্ণ)
যেমন, দিক + নির্ণয় = দিঙনির্ণয় ক্ + ন = ঙ্ + ন
বাক + ময় = বাঙ্ময় ক্ + ম = ঙ্ + ম
১৪) বর্গের ১ম বর্ণ + ৩য়/৪র্থ/অন্তঃস্থ বর্ণ/হ = ৩য় বর্ণ + ৩য়/৪র্থ/অন্তঃস্থ বর্ণ/হ
যেমন, দিক + বিজয় = দিগ্বিজয় ক্ + ব = গ + ব
সৎ + ব্যবহার = সদ্ব্যবহার ত্ + ব = দ্ + ব
ষট্ + যন্ত্র = ষড়যন্ত্র ট্ + য = ড় + য
১৫) ম + ক/গ/অন্তঃস্থ বর্ণ/উষ্ম বর্ণ = ং +
সম + গীত = সংগীত ম্ + গ = ং + গ
প্রিয়ম + বদা = প্রিয়ংবদা ম্ + ব = ং + ব
সম + সার = সংসার ম্ + স = ং + স
১৬) ম + স্পর্শ বর্ণ = ৫ম + স্পর্শ বর্ণ
সম + পূর্ণ = সম্পূর্ণ ম্ + প = ম্ (প-বর্গের ৫ম) + প
সম + ন্যাস = সন্ন্যাস ম্ + ন = ন্ (ত-বর্গের ৫ম) + ন
সম + চয় = সঞ্চয় ম্ + চ = ঞ (চ-বর্গের ৫ম) + চ
১৭) সম্/পরি + কার = সং/পরি + স্কার/ষ্কার
যেমন, সম্ + কার = সংস্কার ম্ + ক = ম্ + স্ক (স্ + ক)
পরি + কার = পরিষ্কার ই + ক = ই + ষ্ক (ষ্ + ক)
১৮) ম্ + ত = ন্ + ত
যেমন, গম্ + তব্য = গন্তব্য ম্ + ত = ন্ত
১৯) ন্ + শ/স = ং + শ/স
যেমন, হিন্ + সা = হিংসা ন্ + স = ং + স
২০) ষ্ + ত = ষ্ + ট
যেমন, বৃষ্ + তি = বৃষ্টি
২১) হ্/ধ্/ভ্ + ত = গ্/দ্/ব্ + ধ (গ্ধ/দ্ধ/ব্ধ)
যেমন, দহ্ + ত = দগ্ধ হ্ + ত = গ্ধ
বুধ্ + ত = বুদ্ধ ধ্ + ত = দ্ধ
লভ + ত = লব্ধ ভ্ + ত = ব্ধ
উপরের সন্ধির বেশিরভাগ ঘোষীভবন ও সমীভবনের মাধ্যমে হয়েছে বলা যায়। ক-এর গ হয়ে যাওয়া ঘোষীভবনের উদাহরণ। জ-এর টানে ত্-এর জ্ হয়ে যাওয়া সমীভবনের উদাহরণ।
Comments
Post a Comment